বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম কোনো লেখকের এক শিরোনামে ভিন্ন প্রচ্ছদে কবিতা ও উপন্যাসের বই! ক্যাপশন: নিভৃতে বাস করে ব্যস্ত শহর থাকে বহু দূরে। নির্জনে খুঁজে পায় তাঁর আপন অস্তিত্ব। জীবন কাটে নস্টালজিক ভালোবাসায়। সময় কাটে বিচিত্র অভিজ্ঞতায়। অদ্ভুত রহস্য তাঁর পিছু ছাড়ে না কখনো। সেই রহস্য সমাধান তাকে নিয়ে যায় আরও বিচিত্র জগতে। নিঃসঙ্গতা, নস্টালজিক প্রেম আর মনস্তাত্বিক রহস্য নিয়ইে এগিয়ে চলে নিভৃতের খেয়ালি জীবন। কিন্তু এই জীবনের রহস্য কী? কী আছে নিভৃতের অতীতে? নিভৃতে সিরিজ এর তৃতীয় উপন্যাস এবং কবিতা। উপন্যাস আর কাব্যে আরও একবার ঘুরে আসুন নিভৃতের নিভৃত জীবনে। কিছু অংশ: (উপন্যাস)- ‘দুটো প্রেম করতে হবে। তবে দুটোই হতে হবে ব্যর্থ প্রেম। প্রথম প্রেমে তুই কষ্ট দিবি। পরেরটাতে নিজে কষ্ট পাবি। প্রথমটা তোকে দিবে অপরাধবোধ, সাথে প্রেমে তুই কতখানি সৎ ছিলি তার উপর নির্ভর করে কিছু পাপবোধ। আর দ্বিতীয় প্রেমে পাবি মন ভাঙার কষ্ট। মাথার ভিতরে দেখবি তখন কবিতা গিজিগিজ করছে। বুঝেছিস আমার কথা?’ ‘মানুষ একা থাকতে পারে না। যে মানুষটা চুপচাপ নিরিবিলি থাকতে ভলোবাসে, সেও এক সময় হাঁপিয়ে উঠে। মানুষের সঙ্গ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। কোনো একটা অবলম্বন খুঁজে বের করে।’ ‘মানুষ নিজেই তাঁর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। জীবনে অন্য মানুষের দরকার নেই। অধিকাংশ মানুষই এই সহজ ব্যাপারটা বুঝে না।’ ‘কবি হবার দ্বিতীয় শর্ত হলো কোনোভাবেই সুখে থাকা যাবে না। মানুষের সহজাত স্বভাব হচ্ছে সে সুখে থাকতে চায়। এজন্য সুখের স্মৃতি চট করে মনে পড়ে। দু:খের স্মৃতি মনে পড়ে না। দু:খের স্মৃতি মনে রাখে শুধু প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা। কিন্তু তার ভিতর কোনো দু:খবোধ থাকে না। সে সবাইকে শোনাতে চায় দ্যাখো, আমি জীবনে কত কষ্ট করেছি অথচ আজ আমি সফল। দু:খ তখন আর দু:খ থাকে না, অহংকার হয়ে যায়।’ ‘নারী পুরুষে কোনো দিন বন্ধুত্ব হয় না। অবদমিত কামনা থাকেই। কামনা অবদমিত থাকতে থাকতেই তাদের আলাদা হয়ে যেতে হয়। কিংবা কামনা জেগে উঠতে চাইলেই কিছু সমযের জন্য দূরে চলে যেতে হয়। দূরে না গেলে তারা প্রেমে পড়ে। সমস্যা দুটো। প্রথমত, দুজনের একজন আগে প্রেমে পড়ে। আরেকজন পড়ে দেরিতে। আর ছেলেবেলার বন্ধুত্বে পুরো ব্যাপারটা বুঝতেও বেশ সময় লাগে। মনের ভিতর প্রেমের জটিল পক্রিয়া চলতে থাকে কিন্তু মনে হয়ে যেন খুব স্বাভাবিক। অনেক কঠিন কথাই বলে ফেলি কিন্তু মনে হয় যেন তেমন কিছু তো বলিনি। কথাটার মর্ম বুঝতে অনেক সময় লাগে। বিশেষ করে ছেলেদের। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বড় হয় দেরিতে। সম্পর্কের জটিলতা বুঝতে তাঁদের দীর্ঘ সময় লাগে।’ ‘সব কবিদের দুজনের সাথে কথা বলতে হয়। নিজের সাথে আর আর অন্য কোনো চরিত্রের সাথে। এই যেমন সুনীলের নিখিলেশ আর নীরা।’ (কবিতা)- তোমার নিকট এসে কী পেয়েছি বলো? অভিমানে দূরত্ব আরও দূরে গেল - এই যে এখন লিখছি আমি তোমায় পড়ার ক্ষণে হয়তো ভাববে তুমিও দূরত্ব এই সময়ে আরও কত দূর হারাল? (গোধুলিবেলার কাব্য) ফিকে হয়েছে ধীরে তাঁর মুখচ্ছবি জানবে না কখনো, জানে না অবধি অরণ্য যদিও সে নিয়েছে কেড়ে তবুও আঁচল ভরে দিয়ে গেছে নদী (গোধুলিবেলার কাব্য) দুই একটা দিন আমি তোমায় পাব দু’একটা দিন তুমি আমায় পাবে বাকি দিনগুলো শূন্য থেকে যায়, থেকেই যাবে? (দুই একটা দিন) এই শ্রাবণ সাঁঝের বেলা কোন আকাশে ভাসাবে তুমি জলজ দু:খের ভেলা? (সাঁঝ) কে আর ফিরিতে পারে? চলে গেলে জলের ওপারে! ডুবে গেলে জলের গভীরে এই বেশ, তুমি থাকো দাঁড়িয়ে তীরে জল না ছুঁয়ে তবু জলের প্রেমে! (জলজ)
জম্ম ২১ ডিসেম্বর, ১৯৭৯। ঢাকায় থাকি। একটি ব্রিটিশ কোম্পানিতে দক্ষিণ এশিয়া জোনের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছি। তবে সুযোগ পেলেই ডুবে যাই লেখালেখিতে। আমার প্রথম উপন্যাস ‘নিভৃতে’ প্রকাশিত হয় ২০২০ এর জুনে। এই বই কতজন পড়ল আমি সেই চিন্তা বাদ দিয়ে পনেরো দিন পর প্রকাশ করলাম মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা আমার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বাবা’। এরপর ডিসেম্বরে প্রকাশ করলাম নিভৃতে সিরিজ এর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নির্জন’। ২০২১ এ যাত্রা শুরু করি আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস ‘একজন নির্জনতম’ দিয়ে। জীবনানন্দ দাশের জীবনীভিত্তিক এই উপন্যাসটি ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। আশা করি ভবিষ্যতেও জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আরও লিখব। এই লেখক পরিচিতি যখন লিখছি তখন প্রকাশের অপেক্ষায় আছে ‘নারীরণ্য’। নিভৃতে সিরিজ এর তৃতীয় উপন্যাস এটি। আমার বেড়ে ওঠা বরিশাল ও ঢাকায়। শিক্ষাজীবন কেটেছে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।