কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী ছিল। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা ‘কিশোরগঞ্জ’-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। প্রায় সাড়ে আটশ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে কিশোরগঞ্জের সাহিত্যের ইতিহাস। পুরো মধ্যযুগব্যাপী চর্চিত এ জেলার সাহিত্য বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। গত শতকের প্রথমার্ধে সর্বপ্রথম এ জেলায় মুদ্রিত আকারে পত্রিকা প্রকাশ পায়। ১৯৪৫-৪৬ সালে প্রকাশ পায় জেলার প্রথম ছোটকাগজ। এ বইয়ে পত্রিকা ও ছোটকাগজের কালপর্বিক বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। ১৮৫০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে যারা সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন এমন ১৯৮ জন সাংবাদিকের বিবরণও লিপিবদ্ধ হয়েছে এ বইয়ে। কালপর্বিক ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জের সাহিত্য, কিশোরগজ্ঞের ছড়া, ছড়াকার ও ছড়ার গতি-প্রকৃতি, কিশোরগঞ্জের পত্রপত্রিকা, কিশোরগঞ্জের ছোটকাগজ, সাংবাদিকতায় কিশোরগঞ্জ (১৮৫০-২০০০) এবং পরিশিষ্ট হিসেবে আছে অহংকারের ভাষা: ভাষাজ্ঞানের আবশ্যকতা, বানান নিয়ে নানান কথা, প্রসঙ্গ: শব্দের অপ-প্রয়োগ ও ভুল প্রয়োগসহ রয়েছে আলোকচিত্র। ‘কালপর্বিক ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জের সাহিত্য’ রচনায় লেখক জাহাঙ্গীর আলম বলেনÑ‘কিশোরগঞ্জ জেলায় কে কবে সর্বপ্রথম সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন তার কোন সঠিক ইতিবৃত্ত পাওয়া যায় না। যতদূর জানা যায়, সুদূর দ্বাদশ শতাব্দীতে তাড়াইল থানার বোরগাঁও গ্রামে প্রাচীন কবি কাব্যসাধনায় যথেষ্ট বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন।’ লেখক এ বইটি সংযুক্ত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলার প্রথম পত্রিকা। ‘আর্য্য-গৌরব’। এ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১২ সালের অক্টোবর মাসে। অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে মতভেদ থাকায় লেখক পত্রিকাটির ছবিও সংযুক্ত করে দিয়েছেন এ বইটিতে। লেখক জাহাঙ্গীর আলম জাহান কিশোরগঞ্জ শহরতলীর কাটাবাড়িয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ি। মূলত তিনি একজন ছড়াকার। লোক-সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণামূলক একাধিক বই রয়েছে তার। ২১৬ পৃষ্ঠার এ বইটিতে নানা তথ্য উপাত্তের খনি বলা চলে। কিশোরগঞ্জের শিল্প সাহিত্য নিয়ে এমন একটি সমৃদ্ধ বই অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য।