ঔপনিবেশিকতার জাঁতায় পিষ্ট মুসলিম উম্মাহ ধুঁকছিল হতাশা আর নিষ্ক্রিয়তার চোরাবালিতে। নিভু নিভু করে জ্বলা সর্বশেষ আশার আলো উসমানি খিলাফতের ধ্বংসাবশেষটুকুও নিশ্চিহ্ন হয় ১৯২৪ সালে। হতাশা আর জ... See more
TK. 170 TK. 119 You Save TK. 51 (30%)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
কমিয়ে দেখুন
আর মাত্র ৩দিন বাকি, বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
আরো দেখুন
আর মাত্র ৩দিন বাকি, বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
নিশ্চিত ৫০% ছাড়ে পাচ্ছেন সমকালীন প্রকাশন-এর সকল বই!
ঔপনিবেশিকতার জাঁতায় পিষ্ট মুসলিম উম্মাহ ধুঁকছিল হতাশা আর নিষ্ক্রিয়তার চোরাবালিতে। নিভু নিভু করে জ্বলা সর্বশেষ আশার আলো উসমানি খিলাফতের ধ্বংসাবশেষটুকুও নিশ্চিহ্ন হয় ১৯২৪ সালে। হতাশা আর জড়তার এই ভাঙনমুখর সময়ে এক মুয়াজ্জিনের নীরব কিন্তু দৃঢ়লয় পথচলা শুরু হয় মিশরের সুয়েজ তীর থেকে। তাঁর প্রভাবক আজানে একে একে জড়ো হয় হীরকখণ্ডগুলো। সেই আজানের প্রত্যয়ী সুর একসময় মিশর ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বের ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র একটি পুনর্জাগরণের সাড়া পড়ে যায়। একটি নতুন যুগের সূচনা হয় মুসলিম বিশ্বে। জড়তা আর নিষ্ক্রিয়তার বিপরীতে উদ্যম আর সক্রিয়তার উত্তাপ ছড়িয়ে যায় সমগ্র উম্মাহর মাঝে। নতুন যুগের এই নির্মাতার নাম হাসান আল বান্না, যার অনিবার্য অভিধা হয়ে দাঁড়ায় ইমামুদ-দাওয়াহ। ইমামকে নিয়ে প্রচুর লিখেছেন তাঁরই ভাবশিষ্য শাইখ ইউসুফ আল কারযাভী। সেখান থেকেই একঝলক সংকলিত হয়েছে এ ছোট্ট বইটিতে।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।
একটানে শেষ করে ফেললাম অসাধারণ এই বইটি । মাত্র ৮৮ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ হয়েছে প্রচ্ছদ প্রকাশন থেকে । ড. ইউসুফ আল কারযাভীর “ইখওয়ানুল মুসলিমিনঃ দাওয়াত, তারবিয়াত ও সংগ্রামের সত্তর বছর” বইয়ের ইমাম হাসান আল বান্নার জীবনের অংশ বিশেষ নিয়ে মুহাম্মদ শাহদাত হোসেনের অনুবাদে “ইমাম হাসান আল বান্না নতুন যুগের নির্মাতা” বইটি । অসাধারণ একটি অনুবাদ কর্ম ।
নতুন করে জানলাম যেন রাহবার হাসান আল বান্নাকে - মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাসান আল বান্নার মতে সমাজকে পরিশোধিত করতে হলে মুমিন হবার পাশাপাশি সবার আগে হৃদয়বান মানুষ হতে হবে । তার জীবনের কথা, কাজ ও কর্মে তার মহানুভবতার গল্পই ফুটে উঠে । তিনি তার বন্ধু ও কর্মীদের হৃদয়বান মানুষ হবার আহবানই বারবার করেছেন ।
তরুণ ইমাম হাসান আল বান্না তার লেখায় বলেন – “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল সেই, যে মানুষের কল্যাণ এবং মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর মধ্যে কল্যাণ অন্বেষণ করে, তাতেই নিজের কল্যাণ মনে করে।”
এক সাংবাদিক ইমাম বান্নাকে জিজ্ঞাস করেছিলেন আচ্ছা আপনি নিজের পরিচয় কীভাবে দিবেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন- “আমি ! আমার পরিচয় ! আমার পরিচয় হল আমি এমন একজন পর্যটক, যে হাকিকতকে খুঁজে ফিরছে; জীবনের নিগূঢ় রহস্যকে অনুসন্ধান করছে । আমার পরিচয় হল আমি এমন সাধারণ মানুষ, যে মানুষের মাঝে ডায়োজিনিসের বাতি দিয়ে মানবতাকে খুঁজে ফিরছে । আমার পরিচয় আমি এক কপর্দক শূন্য মানুষ, যে নিজের অস্তিত্বের রহস্যকে বুঝতে চায় । আমি ঘোষণা করছি- আমার নামাজ আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণ আল্লাহর জন্য । ”
এখানে ডায়োজিনিসের বাতির কথা বলতে যেয়ে হাসান আল বান্না বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক ডায়োজিনিস দ্য সিনিকের জীবনে ঘটা ঘটনাকে ইঙ্গিত করেছেন । একদা দিন দুপুরে ডায়োজিনিস লন্ঠন হাটে বাজারে উপ্সথিত হলেন । দিন দুপুরে ডায়োজিনিসের হাটে লন্ঠন দেখে অনেকে হাসতে লাগল । তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল ‘ এই ভরদুপুরে লন্ঠন হাটে কোথায় যাচ্ছেন? তিনি উত্তর দিলেন আমি আসলে মানুষ খুঁজছি । গ্রিসের কোথায় মানুষ পাওয়া যাবে, কেউ বলতে পারবে কি?
শিক্ষকদের নিয়ে এক আলোচনা সভায় ইমাম হাসান আল বান্না বলেন- “ জনতার এখন খুব বেশি প্রয়োজন হৃদয়বান মানুষের, যার হৃদয় থেকে তার চারপাশের মানুষের হৃদয়গুলো দীপিত ও আলোকিত হবে । এমন রব্বানি ঝরনাধারা আবশ্যক, যে ঝরনাধারা থেকে তার চারপাশের মানুষগুলো সিক্ত হবে এবং এর মাধ্যমে মানুষের অবস্থার রূপান্তর ঘটবে; ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাবে । ধীরে ধীরে মানুষ ধর্ম হীনতার অন্ধকার থেকে দ্বীনের আলো ঝলমল উপত্যকায় চলে আসবে । ”