কবিতার কাছে তুমি আজন্ম ঋণী, দায় শোধ করো অথবা নিজেকে সমর্পিত করো, কবিতা তাহলে তোমার– এ-রকম ডাক দিয়ে বিনয় কর্মকার তার কবিতায় পাঠকদের আমন্ত্রণ ও আলিঙ্গন করেন। এ আলিঙ্গন তিমিরে নয়, কবির চোখের আলোয় রচিত ও কীর্তিত হয়। এ-ও এক শ্যাওলা ও শিশিরের বিস্ময়। খানিক দ্বান্দ্বিক। বিনয়ী প্রস্তাবনা বা প্রিলিউডের (চৎবষঁফব) মতো বিনয়ের কবিতা মুখ দেখায়। দ্বান্দ্বিক চিত্রকল্পের মুখর হইচই শেষে সিন্থেসিসের (ঝুহঃযবংরং) মতো সমীক্ষণ অনাবৃত হয়। এ-রকম অনুভূতি পাঠকের হতেই পারে। মনে হতে পারে, পাঠের আগে খানিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। আসলে তা নয়। উসখুস করার সুযোগ নেই। সত্যের উদ্ভাস থাকে। ওই উদ্ভাসের কাছে আত্মসমর্পণ অনিবার্য। প্রাণ-প্রকৃতি, বিজ্ঞান, অণুচিন্তা, সমাজদর্শন আর হৃদয়াবেগের পরিচ্ছন্ন দ্রবণ, বিনয়ের কবিতা। নিরাকার বোধকে আকার দিয়ে খাঁচায় পুরে দিয়েছেন মাপজোক করে। খাঁচা বা কবিতার পরিকাঠামো, অন্যকথায় বুনোন-কৌশল কবির নিজস্ব। ভিন্নতর ব্যক্তিক উপলব্ধিকে সঞ্চালন করতে হলে তার সীমাস্ত, জমিন ও আধার চিহ্নিত করা জরুরি। ‘চেনা কোনো সংকেত নেই’, বিনয়ের বিনয়ী (?) উচ্চারণ। চেনা পথে পা ফেলেননি বিনয় কর্মকার, চেষ্টাও করেননি। নিজের উপলব্ধি ও সংবেদের মসলিন-সুতার টানে তিনি কবিতার পাঠককে নিয়ে যান অন্যপথে। বেপথু করেন না। কেন করবেন, কবি তো বিপথগামী নয়। পথপরিক্রমায় তার পরিত্রাহী চিৎকার থাকে। ওই চিৎকার শ্রুতিতে ধরা পড়ে না। কবিতার সুকুমার অক্ষরে কথা বলে। বিনয়ের কবিতায় যেমন ‘জলাঙ্গীর ঢেউ’ আছে তেমন রাষ্ট্র, জাতি, ব্যক্তিমন ও বৈশ্বিক স্খলন-পতনের জাগতিক ঢেউ কবিতার স্পর্শবিন্দুতে আছে। উৎপল দত্ত কথাকার-কবি-প্রাবন্ধিক