বাড়ির একটু বাইরে, উঠোনে অথবা পাড়ার মোড়ের দোকানে কিংবা স্কুল থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে, ঘর-অফিস-কিংবা রাষ্ট্রে ‘নারী’ এক কর্মবহুল জীবনের নাম। একই সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিনিয়ত কুণ্ঠিত দলিত নিষ্পেষিত সাংঘর্ষিক এক জীবনেরও নাম নারী। এ কুণ্ঠা তার দৈহিক আকার থেকে শুরু করে শারিরীক সক্ষমতা কিংবা অক্ষমতারও। এ দলন তার ওপর পেশীশক্তির-পুঁজিবাদের-রাষ্ট্রের। এ নিষ্পেষণ সমাজিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে শুরু করে ধর্ম আর পারিবারিক প্রথারও। প্রতিনিয়ত নারীকে পেশিশক্তির মুখোমুখি হতে হয়। এত বিরোধ পার হতে হতে নারী কখনও নিশ্চিহ্ন হয় হতাশায়, কখনও জ¦লে ওঠে রোষে। কখনও বিক্ষিপ্ত হয় তার মেধা, কখনও ধার চকচকে হয়ে ওঠে তার প্রজ্ঞা। নারীর ওপর এ নিষ্পেষণ দেশ-কাল ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক। তবু নারীর মেধা বংশগতির ধারায় প্রবাহিত, মাতৃত্বে বিভাজিত। এই নিগ্রহের ত্রাশ তার অভিজ্ঞতায় অর্জিত। জীবনের পর্বগুলো পার হতে হতে সংঘর্ষে সংঘর্ষে নারীর মুখ প্রজ¦লিত। বহুর অবয়ব ধারণ করে। শতরূপে ঘটে তার প্রকাশ। কখনও মায়াময়-ব্রতী-পথদর্শী। কখনও নিরীহ লাজুকতার কোমলতা ছিঁড়ে খুঁড়ে হয়ে ওঠে নির্মম আগ্রাসী, কখনও সর্বনাশী। নারীর খুব গভীরের যে কথা বলা যায় না যে নির্মমতা সামাজিকভাবে গোপন থাকাই শ্রেয়, যে বিক্ষোভ পারিবারিক প্রথার বাইরে, যে প্রেম সমাজ মানে না ‘হান্ড্রেড ফেসেস অফ উইমেন’ বইটিতে তারই সত্যাসত্য রূপ দেখা যায়। ব্যক্তির জীবন এখানে ছড়িয়ে পড়েছে এক থেকে বহুতে। এখানে ঘটনার বিন্যাস যখন যে চরিত্রের সংস্পর্শ গ্রহণ করেছে তখন সেই চরিত্রটিই বিশেষ হয়ে ধরা পড়েছে। এখানে ব্যক্তির জীবনের বয়ান অথচ চরিত্রগুলো উপন্যাসের মতো প্রভাববিস্তারকারী। এই বিশেষের আড়ালে ঘটনার প্রবহমানতায় ব্যক্তির যন্ত্রণা কিংবা অবোধ-অব্যক্ত কান্না কখনও সংক্ষুব্ধ অভিমান আর ক্ষোভের পারগেশন এমন এক একটি পর্যায় অতিক্রম করেছে যা পাঠকের মনে সংখ্যাতীত প্রশ্নেরও জন্ম দেয়।