‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ’ শব্দ তিনটি এক অভিন্ন চেতনা ধারণ করে। এর যে কোনো একটি শব্দের অনুপস্থিতি সে-ই গভীর চেতনার ঐকতানকে বিনষ্ট করে। মুক্তিযুদ্ধকে আখ্যান করে লেখা বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তম ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’। সেই উপন্যাসের সমগ্র পরিসরজুড়ে বঙ্গবন্ধু মহানায়কের মতো পরিভ্রমণ করেন। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’উপন্যাস শেষ হয় বঙ্গবন্ধুর প্রবল রাজনৈতিক শক্তির উৎস ছাত্রলীগের দুই টুকরো হয়ে দুদিকে চলে যাওয়ার মধ্যদিয়ে। আর ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’উপন্যাসের শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর—বঙ্গবন্ধুর জীবনের তৃতীয় ও শেষ পর্যায়। প্রথম পর্যায় ছিল তাঁর শিক্ষাজীবনসহ রাজনীতিতে অভিষেকের প্রস্তুতিপর্ব। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাঙালির অধিকার আদায় ও রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আর তৃতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ নামক একটি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা হিসেবে বাঙালির জন্য একটি আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রচেষ্টা। এই লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর মিশন শেষ হওয়ার আগেই একাত্তরের পরাজিত দেশি-বিদেশি শত্রুরা রাতের অন্ধকারে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরসহ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তারপর দীর্ঘ উনিশ বছর তারা রাষ্ট্র শাসন করে, বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে তারা বাংলাদেশকে শতবছর পিছিয়ে দেয়। ‘বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর’—এই সময়বৃত্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জীবন এখানে এক হয়ে মিশে গেছে। বাংলা সাহিত্যে এটাও এক স্বতন্ত্রধারার উপন্যাস, ঐতিহাসিক তো বটেই!
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের সম্রান্ত পরিবার ভূঁইয়া বাড়িতে জন্ম। শৈশব-কৈশাের কেটেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে । শিক্ষাজীবন কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ এনজিএফএফ স্কুল, সিলেট সরকারি এমসি কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদপাঠ ও উপস্থাপনা করেছেন আট বছর। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বইপত্র উপস্থাপনা করেছেন এক যুগ। কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক গণকণ্ঠে সহসম্পাদক হিসেবে। তারপর সরকারি চাকরি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে। সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সচল হয়ে উঠেছেন নেশার জগৎ লেখালেখি নিয়ে। উপন্যাস, ছােটগল্প, শিশুতােষ ও কিশাের রচনা- সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩০। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসসমগ্র ২০১৫, গল্পসমগ্র ২০১৭ | ২০১৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হলাে বাংলাসাহিত্যে এযাবৎ প্রকাশিত বৃহৎ কলেবরের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং মহান চীনের গৌরবােজ্জ্বল অতীত এবং চীনা জনগণের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা ভ্রমণ উপন্যাস ‘মহাচীনের মহাজাগরণ’ । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন কিউট সাহিত্য পুরস্কার, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, পালক অ্যাওয়ার্ড, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাসপ) পদক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষায় অনগ্রসর মানুষকে শিক্ষার আলােয় আলােকিত করতে সুবর্ণচরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জুবিলি হাবিবউল্যা মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপুল গ্রন্থসমৃদ্ধ লাইব্রেরি বজলের রহমান ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার'। ভ্রমণের নেশা আছে। বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, পাহাড়, সমুদ্র তার প্রিয়। ভ্রমণ করেছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। পিতা-নুরুল আলম ভূঁইয়া, মা-আনােয়ারা বেগম, স্ত্রীজোহরা সুলতানা। দুই পুত্র : শাহরিয়ার রাইসুল ইসলাম, শাহমান রাউফুল ইসলাম । স্বপ্ন : উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ।