"ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা"বইটির ভূমিকা: এক ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা' গ্রন্থে আমি মূলত পাকিস্তানের ২৪ বছরে বিভিন্ন আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান সম্পর্কে মূল্যায়ন করার প্রচেষ্টা পেয়েছি। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় যে, ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলন ছাড়া পাকিস্তানের ২৪ বছরের প্রতিটি আন্দোলনই বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে। তখন বামপন্থী রাজনৈতিক গােষ্ঠী কিংবা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এককভাবে কোনাে আন্দোলনেরই নেতৃত্ব দিতে পারেনি। এঁরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের লেজুড়বৃত্তি করেছে; আর নাহয় নিপ' থেকেছে। এটাই হচ্ছে ঐতিহাসিক সত্য। * বর্তমান বিশ্বে সমাজতন্ত্র দর্শনের প্রবক্তা কার্ল মার্কস বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের চরিত্র সম্পর্কে চমৎকার মূল্যায়ন করে গেছেন। স্বজনবন্ধু এঙ্গেলসকে প্রেরিত এক চিঠিতে মার্কস্ এ মর্মে লিখেছেন যে, '... এই শ্রেণীর লােক (বুদ্ধিজীবী) যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনাে বিপদের সম্ভাবনা থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত খুব বড় বড় কথা বলছে, বড় বড় প্রতিজ্ঞা করছে; এমনি ভয়ঙ্কর শব্দও উচ্চারণ করছে। কিন্তু সামান্য বিপদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই এরা ভীত সন্ত্রস্থ এবং আপােষভাবাপন্ন হয়ে পড়ে। .... আর যখনই অস্ত্রধারণপূর্বক যুদ্ধ করার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তখনই এই খুদে বুর্জোয়ারা তাদের সংকীর্ণ অস্তিত্বের স্বার্থে সমস্ত আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং সবশেষে যখন প্রতিক্রিয়াবাদীরা জয়ী হয়, তখন তারাই তাদের লঘুচিত্ততার জন্য বিশেষভাবে বঞ্চিত আর নিপীড়িত হয়।' দুই প্রখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক টয়েনবি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় সম্পর্কে একটা চমৎকার উক্তি করে গেছেন। তিনি এ মর্মে বলেছেন যে, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় জন্ম থেকে অসুখী। কথাটা দারুণ অর্থবহ। কেননা বুদ্ধিজীবী, অর্থাৎ এই উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ বুর্জোয়া সমস্ত রকমের আরাম-আয়েশ পরিপূর্ণভাবে ভােগ করার জন্য লালায়িত; অথচ এরা সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত বুদ্ধিজীবী' শিরােনামের সম্প্রদায় শ্রেণঢ়িত হত মোটেই রাজি নন।
(জন্ম: ৯ আগস্ট, ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৬ জুন, ২০০৪) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের চরমপত্রের পরিচালক, লেখক ও কথক ছিলেন। 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সাহস, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল৷ সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার থেকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি একজন কলামিষ্ট৷ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি৷ আর আখতার মুকুল ১৯৪৫ সালে দিনাজপুর মহারাজা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি দিনাজপুর রিপন কলেজ(ব্রাঞ্চ) থেকে আই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৪৭ সালে৷ ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তিনি ১৯৪৮ সালে জননিরাপত্তা আইনে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং ১৯৪৯ সালে জেলখানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন৷ ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন৷[৩] ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈঠকের সময় যে ১১ জন ছাত্রনেতা উপস্থিত হন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। অন্যান্যরা ছিলেন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক, মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সুলতানা, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মোমিন, এস এ বারী এটি, সৈয়দ কামরুদ্দীন হোসেইন শহুদ, আনোয়ারুল হক খান, মঞ্জুর হোসেন, আনোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এম আর আখতার মুকুল সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন৷ সাপ্তাহিক 'নও বেলাল', 'পাকিস্তান টুডে' , দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ইত্তেফাকের জন্মলগ্ন থেকে ১৯৬০ সালের জুলাই পর্যন্ত এই পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬১ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এম আর আখতার মুকুল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইউডিআই-এর ঢাকাস্থ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন৷ একই সঙ্গে তিনি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় এবং পরে দৈনিক পূর্বদেশেও চাকুরী করেন৷ এম আর আখতার মুকুল ১৯৭১ সালে প্রবাসী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে যোগদান করে তথ্য ও প্রচার দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান৷ ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়রি তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে এম আর আখতার মুকুল দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন৷