বইটি আমরা কেন লিখেছি তার কারণগুলো তুলে ধরার আগে আমাদের সম্পর্কে কিছু কথা না বললে নয়। আমরা দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একই সাথে ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। ২০০৫ সালে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছি। আমরা দু’জন শিক্ষকতা দিয়ে পেশা শুরু করি। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই পেশায় আছি। এরই মাঝে আমরা দু’জনে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। বর্তমানে আমরা যথাক্রমে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমরা Management ও Human Resource Management বিষয়টি বহুবার পড়িয়েছি। Career নিয়ে পাঠ্যবিষয় থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ যৎসামান্য। বিশেষ করে আমাদের দেশে। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নকালে তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন একটা ভাবে না। তারা ভাবতে শুরু করে শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে কিংবা শিক্ষাজীবন শেষ করে। তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে- যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান সীমিত, জাতীয় কারিকুলামে সঠিক নির্দেশনার অভাব এবং চাকরিতে নিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে অসমাঞ্জস্যতা। শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করে নিজের জ্ঞান-গরিমা খাটিয়ে কিংবা পরিবারের সহায়তায়। কখনও সিনিয়র ভাইদের পরামর্শে। অনেক শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যতাও হারিয়ে ফেলে এবং হতাশায় ভুগতে থাকে দিনের পর দিন। শিক্ষকতা পেশা থেকে আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভুল পথে হাঁটে ও তাদের ক্যারিয়ার আশা নিরাশায় কিংবা হতাশায় পরিণত হয়। অনেক শিক্ষার্থী অভিমান করে বিদেশে পাড়ি জমায়। আবার অনেকে ভুল চাকরিতে যোগদান করে, পরে চাকরি থেকে রিজাইন দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এতে হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়। এর একটি সঠিক অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সেই সাথে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার অনুসন্ধান ও ক্যারিয়ার নির্বাচনে গবেষণাভিত্তিক পরামর্শদানের লক্ষ্যে “ক্যারিয়ার ভাবনা : স্বদেশ না বিদেশ?” শিরোনামে বইটি রচনা করেছি। বইটি আমরা নয়টি অধ্যায় দিয়ে সাজিয়েছি। প্রথম অধ্যায়ে আমরা ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্যারিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের তথ্য উপাত্ত তুলনা করেছি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বদেশে ক্যারিয়ার বিষয়ে গভীরভাবে আলোকপাত করেছি। তৃতীয় অধ্যায়ে বিদেশে ক্যারিয়ার ভাবনা ও তাদের বিভিন্ন দিকগুলো আলোচনা করেছি। চতুর্থ অধ্যায়ে সাহিত্য পর্যালোচনা করেছি। এ অধ্যায়ে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও তার ফলাফল, যুক্তিতর্ক ও পরামর্শ তুলে ধরেছি। পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমরা যুক্তরাজ্য থেকে ১০২ জন ও বাংলাদেশ থেকে ২৭৬ জনের কাছ থেকে সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেছি। আমরা ২১টি Closed ended questions ও ১টি Open ended question এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। আমরা একান্তভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এ তথ্য-উপাত্ত যে কোন শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীকে তাদের ক্যারিয়ার মূল্যায়নে সহায়তা করবে। আমরা বিশ্লেষণ করেছি একটি সঠিক ক্যারিয়ারের পথ এবং কিভাবে এ পথে সফলতা আসবে তার ব্যাখ্যা তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে উপস্থাপন করেছি। এই অধ্যায়ের আলোচনা একজন ছাত্রকে একটি সঠিক ক্যারিয়ারের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। সপ্তম অধ্যায়ে কিভাবে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া যায় এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো-একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারের সুনির্দিষ্ট পথ দেখানো। এ লক্ষ্যেই আমাদের 'Borderless Career development model' উপস্থাপন করেছি। এ মডেলটির প্রয়োগ শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের বাইরেও ক্যারিয়ার নির্বাচনের সঠিক ধারণা ও কৌশলের জন্য সহায়তা করবে। সপ্তম অধ্যায়ে আমরা আরো ক্যারিয়ারে কিভাবে সফলতা আসবে তার জন্য বিশেষভাবে ১১টি টিপস দিয়েছি ও তা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছি। টিপসগুলো অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ারের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। অষ্টম অধ্যায়টি একটু ব্যতিক্রমধর্মী। এ বিষয়টি আমাদের বাংলাদেশসহ অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা এখনও ভাবতে পারেনি। সেটি হলো "Emplayability Skills" বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো তাদের শিক্ষার্থীদেরকে চাকরি বাজারে প্রবেশ করার আগে তাদের যে একটি সম্মুখ জ্ঞান দিয়ে থাকে সাধারণত স্নাতক ডিগ্রির প্রথম বছর থেকে শেষ বছর পর্যন্ত। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবে বুঝে যায় চাকরি বাজারে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন। Presentation Skills, Communication Skills, Problem Solving Skills, Writting Skills, Competency Skills, CV Writing, Cover letter writing, How to face Viva, এবং চাকরিদাতা কি কি আশা করে। আমরা এ অধ্যায়টি বিশদভাবে আলোচনা করেছি যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন শেষ করে অতিরিক্ত হতাশায় বা দ্বিধাগ্রস্থ না হয়। সর্বশেষ নবম অধ্যায়টিতে সাক্ষাৎকারের শীর্ষ ১০টি দক্ষতার টিপস তুলে ধরেছি যা থেকে শিক্ষার্থীরা বেশ উপকৃত হবেন। বইটি লিখতে আমরা প্রায় দুই বছর কাজ করেছি। আমরা একান্তভাবে চেষ্টা করেছি একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরতে আমাদের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সামনে। এ উদ্যোগে দেশ ও বিদেশের তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে যারা সাহায্য করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বইটি পড়ে যদি কোনো শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী তাদের ক্যারিয়ারের সঠিক পথ খুঁজে পায় তাহলে নিজেদেরকে সার্থক মনে করব। আমাদের একান্ত বিশ্বাস এ বইটি অধ্যয়ন করলে শিক্ষার্থী বা পেশাজীবীরা তাদের ক্যারিয়ার ভাবনা কিংবা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের অগ্রযাত্রা সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে পারবে। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও সর্বোপরি দেশ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে। বইটি আপনারা সকলে পড়বেন এ আশা করছি। যদি কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী প্রকাশে সংশোধন ও পরিমার্জন করা হবে। আপনাদের সকলের সঠিক ক্যারিয়ার বাস্তবায়ন হোক এ প্রত্যাশা সদা ব্রত। ড. বি এম রাজ্জাক ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ
ড. বি. এম. রাজ্জাক ২৩ শে মার্চ, ১৯৭৯ সালে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলাধীন সাতলা ইউনিয়নে বিশ্বাস বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আচমত আলী বিশ্বাস ও মাতা রুপজান বেগম। তিনি ১৯৯৪ সালে সাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৬ সালে ডি. কে. আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমী এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ২০০৩ সালে বিবিএ (অনার্স) ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি একই বিভাগ থেকে ২০০৫ সালে MBA in Human Resource Management-এ প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ২০০৫ সালে Bangladesh University of Business and Technology-তে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তারপর ২০০৬ সালে Northern University of Bangladesh-এ প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা সিটি কলেজে খ-কালীন প্রভাষক ছিলেন। তিনি উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য ২০০৮ সালে লন্ডনে যান ও ২০০৯ সালে গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MA Management অর্জন করেন। তারপর Full Scholarship এ ২০১৪ সালে Kingston University London থেকে MSc Management ও ২০১৭ সালে পিএইচডি লাভ করেন। তার PhD গবেষণার বিষয় ছিল 'The working life of employees in the context of UK SMEs of Bangladesh Origin'. তার Full Thesis টি Kingston University London ও British Library UK ETHOS এ সংরক্ষিত আছে। তিনি দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি প্রভাষক হিসেবে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। তার লেখা আর্টিকেল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশে (Dhaka University Journal of Management, Journal of Bangladesh Public Administrative Training Centre, Bangladesh Journal of MIS, University of Dhaka), কানাডা (International Journal of Business and Management) ও ইউরোপে (Review of Applied Socio-Economic Research)। ২০২১ সালে তার একটি ইম্পিরিক্যাল আর্টিকেল UK ABS Ranked Journal (Benchmarking : An International Journal) এ প্রকাশিত হয়েছে। বি. এম. রাজ্জাক এর একটি গ্রন্থ ও ৮টি আর্টিকেলস দেশ ও বিদেশের স্বনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গ্রিনিচ ইউনিভার্সিটি ইউকে ও কিংস্টন ইউনিভার্সিটি লন্ডনে দুটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান করেন ও দুটি আর্টিকেল উপস্থাপন করেছেন। তিনি Fellow of Higher Education Academy UK ও সদস্য British Academy of Management. তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা, সাহিত্য ও সামাজিক কার্যক্রমে উপদেশ ও সহযোগিতা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে Bangabandhu International Research Centre UK, সহ-সভাপতি, Graduates Club UK ও সহ-সভাপতি 'গ্রেটার বরিশাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে' দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ সাল থেকে নিজ গ্রামে সাতলা পাবলিক লাইব্রেরির সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার লেখা দেশাত্মবোধক গান- 'তোমায় নিয়ে সদা বিভোর থাকি', 'লাল শাপলা পরী', 'একটুকরা দেশের মাটি' ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা- 'এক আলোকবর্তিকার আগমন' দেশ ও বিদেশের টেলিভিশনে বহুবার প্রচারিত হয়েছে ও প্রশংসা অর্জন করেছে। তিনি শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে আজীবন নিজেকে নিবেদিত রাখতে চান।