বীজের অঙ্কুরোদ্গম হতে কৃষির সূচনার ফলে যাযাবর মানুষ একদিন থিতু হয়েছিল। ইতিবৃত্ত বলে, কৃষির সেই প্রাথমিক সূচনা নারীর হাতেই হয়েছিল। পরবর্তীতে মানুষ যখন সমাজ গঠন করল, নারীই ছিল প্রধান। কাল পরিক্রমায় সে স্থান ক্রমেই পুরুষের অধিকারে এসেছে। নারী পড়ে গেছে পাদপ্রদীপের অন্ধকারে। কেবল পিছিয়ে যাওয়াই নয়, কালে কালে হয়েছে নিগৃহীত। এই পশ্চাদপদতা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নানা সময়ে নারীরা প্রতিবাদমুখর হয়েছেন কিন্তু তাতে দৃশ্যপট খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। একুশ শতকে এসে নারীরা এই নিপীড়ন এবং তাদের অধিকার সম্বন্ধে তুলনামূলক অধিক সোচ্চার। তাই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমার হঠাৎ চোখ পড়ে দ্রৌপদীর উপর। পৃথিবীর প্রধান চারটি মহাকাব্যের মধ্যে বোধ করি দ্রৌপদীই সর্বাধিক সোচ্চার, সক্রিয় এবং প্রতিবাদী নারী চরিত্র। বহুকাল ধরে নানা জনে তাঁকে নানা দৃষ্টিতে বিচার করেছেনÑ কখনো তিনি মহাকাব্যের নায়িকা, কখনো নারীবাদের প্রতীক। কিন্তু দ্রৌপদী আমার চোখে খানিক ভিন্নরূপে ধরা দেয়। তাই তিনি ভিন্ন আঙ্গিকেই উপস্থাপিত। মহাভারতের মিথ, অলৌকিকতাকে পাশে রেখে এই উপন্যাসে রক্তমাংসের দ্রৌপদীর ছবিটি আঁকতে চেয়েছি। এই দ্রৌপদী কন্যা, জায়া, জননী, রাজ্ঞী। একজন পূর্ণাঙ্গ নারী যিনি জীবনের চূড়ান্ত অভীষ্ট লাভ করেছিলেন, তাঁর বাহ্যিক পরিচিতির সঙ্গে সঙ্গে মনোজগতের সন্ধান করতে গিয়ে ভারতবর্ষের অতীত, বর্তমান, পৌরাণিক এমনকি অনাগত নারীদের নিভৃত মানসের আখ্যান হতে চায় ‘দ্রৌপদী’।
জন্ম ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে, কীর্তনখোলা নদীর তীরে, বরিশাল শহরে। নদীর অন্য পাড়ে দিনার গ্রামে পিতৃপুরুষের ভিটা। সেখানেই শৈশবের কিছু অংশ কেটেছিল। অতঃপর ছয় বছর বয়সে পিতামাতার হাত ধরে রাজধানীতে আগমন। শিক্ষাজীবন শুরু মায়ের কাছে। এরপর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে, স্কুল জীবনের দশ বছর কাটিয়ে বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ অধ্যয়নরত। লেখালেখির সূচনা ভালোলাগা থেকে। ইচ্ছে ছিল দু’ একটা গল্প লেখার। লিখতে লিখতে একটা উপন্যাসও হয়ত কখনও দাঁড়িয়ে যাবে, এ আশাও ছিল। কিন্তু কেমন করে যেন গল্প থেকে ইতিহাসের পথে চলা শুরু। হয়ত ইতিহাসের ভেতরে অনেক গল্প থাকে বলেই এ যাত্রায় এতো আগ্রহ। ইতিহাস থেকে এখন ছোটগল্প, উপন্যাস, সমালোচনা; লেখালেখি চলছেন। লিখেছেন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে, জাতীয় দৈনিকে। সবকিছু সঙ্গে করে অনেকদিন লিখে যাওয়ার ইচ্ছা।