ইতিহাসের হাতে যারা মার খেয়ে আহত হয়, তাদের দাওয়াই খোঁজে নিতে হয় ইতিহাস থেকেই। বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী ইতিহাসের মার খেয়ে রক্তাক্ত। কিন্তু সেই রক্তক্ষরণ মূলত হচ্ছে ইতিহাসের বিকৃতির কারণে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতা এবং ঔপনিবেশিক স্বার্থের কলমে বাংলা ও বাংলা ভাষা-সাহিত্যের ইতিহাসে ইসলাম ও মুসলমানকে দাঁড় করা হয়েছে আসামীর কাঠগড়ায়। মামলাটি অনেক বড়। মুসলিম বিজয় নাকি এই জনপদে নিয়ে এসেছিলো বর্বরতা, ধর্মীয় জবরদস্তি , হত্যা ও বিনাশ। যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে নেমে এসেছিলো অন্ধকার যুগ। থেমে গিয়েছিলো বাঙালির মনন ও সৃজনশীলতা। একদল ঐতিহাসিক মুসলিম বিজয়ের সময় থেকে প্রায় দেড় শতাব্দীকে আখ্যা দিয়েছেন অন্ধকার যুগ! যা ইতিহাসের বইয়ে তো আছেই, স্থান পেয়েছে পাঠ্যপুস্তকেও। কিন্তু আসলেই কি তখন অন্ধকার নেমে এসছিলো? বাংলায় নেমে এসছিলো বর্বরতা? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজেছেন কবি, দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। তিনি দেখিয়েছেন, তখনকার প্রকৃত চিত্র। বাংলা ভাষা ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনে ইসলাম কীভাবে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলো? কীভাবে নিশ্চিত করেছিলো মুক্তি ও কল্যাণ! এ বই ইতিহাসের গ্রন্থ ও পাঠ্যপুস্তকে স্থান পাওয়া অন্ধকার যুগের সেই মিথকে শুধু চ্যালেঞ্জ করে না, বরং মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। ইতিহাস বিকৃতির জখমের দাওয়াই দেয় ঐতিহাসিক তত্ত্ব-তালাশের পরিক্রমায়। বইটি শুধু ইতিহাস পাঠকদের জন্য জরুরী নয়, এতে নিহিত সত্যের অবগতি প্রয়োজন প্রতিটি বিদ্যালয়ে, প্রতিটি ধারায়। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে ভুল বক্তব্য শোনেননি, এমন শিক্ষিত বাঙালি কমই আছেন। ফলে সত্য ও যথার্থ বক্তব্যের জন্য এ গ্রন্থ সবারই কাজে আসবে।
কবি, গবেষক ও আলেম মুসা আল হাফিজ। ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখর-গাঁও গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে কৃতীত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলেম প্রতিভা-২০০৮ এ সম্মানীত হন। ২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায়, যাত্রাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দা‘ওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। বর্তমানে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১১ সালে হয় তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবি-সমালোচক মুকুল চৌধুরীর সনাক্তধর্মী আলোচনা ‘মুসা আল হাফিজ: কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলাম তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেন গবেষণাগ্রন্থ- মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব (২০১৮)। তরুণ কবি এম আসাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশজন আলোচকের পর্যালোচনাগ্রন্থ ‘মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে’। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৫০টির অধিক বই লিখেছেন।