গল্প বা উপন্যাসের কি নির্দিষ্ট কোনো ঘরানা হয়? আমার তো মনে হয় না। একই উপন্যাসে যদি রহস্য, রোমাঞ্চ, অপরাধতত্ত্ব, বিচিত্র মনস্তত্ত্ব, অতিপ্রাকৃত ও সামাজিক কাহিনির সন্নিবেশ ঘটে, সেটিকে কোন ঘরানায় ফেলা যায়? এ ধরণের একটি উপন্যাসকে আমি অন্তত কোনও ধারায় না ফেলে এর পূর্ণাঙ্গ আস্বাদনই করব শুধু। সুস্মিতা জাফরের লেখা 'জাগরণে যায় বিভাবরী' তেমনই একটি উপন্যাস। পেশায় চিকিৎসক সুস্মিতা জাফর পাঠকের কাছে জীবনের খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তোলা ছোটো গল্পের জন্যই সুপরিচিত। এবারই প্রথম তিনি উপন্যাস লিখলেন। এবং এটির প্রথম পাঠক হিসেবে আমি বলব, দারুণভাবে উৎরে গেছে 'জাগরণে যায় বিভাবরী'। প্রধান চরিত্র ডাক্তার পারিজাতের ভাষ্যে উপন্যাসটি বর্ণিত হয়েছে। অভয়নগর নামে কোনো এক মফস্বলের বিশাল প্রাসাদোপম 'শিউলিবাড়ি'তে পারিজাতের পরিবারের বসবাস। বাড়িটিতে কী এক অস্বাভাবিকত্ব আছে, বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারটিতে আছে এক অজানা রহস্য। পারিজাতের মা তার বড়ো মেয়ে পারিজাতকে আদর করেন না, যত্ম নেন না। তার সকল মনোযোগ ছোটো মেয়ে ইরাবতী ও জমজ ছেলে তারিন –অরিন এবং পিয়ালের জন্য। কিন্তু কেন? পারিজাতকে যত্ন করে নাইয়ে খাইয়ে দেওয়া মারিয়া আন্টির রহস্যটা কী? মসৃণ খাড়া দেয়াল বেয়ে উঠে যায়, ওটা কি মানুষ না অন্যকিছু? ছেলেবেলার প্রতিবেশী ও খেলার সাথী দিলু ছবি এঁকেই কাউকে শাস্তি দিতে পারে। কীভাবে সম্ভব? পরদিন জার্মানিতে পড়তে যাবে যে মেয়ে, সেই প্রাণোচ্ছল ও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ইরাবতী হঠাৎ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা কেন করল? পারিজাতের প্রেমিক পুরুষ সুহাসের দুর্ঘটনা কি শুধুই দুর্ঘটনা? ওর শখের পাখিদের সাথে নিষ্ঠুরতা করছে কে? ডাক্তার শারদ কবীরের বিষয়টি কী? এছাড়াও লেখকের স্বভাবজাত খুঁটিনাটি বর্ণনাসহ সব মিলিয়ে আমি নিজে উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে অপার কৌতুহল অনুভব করেছি, এই ভেবে যে এর শেষ কোথায়, আর এর সমাধানই বা কী! সুস্মিতা জাফরকে শেষ বিজয়ের হাসিটি আমি হাসতে দেব এ কারণে যে, পাঠককে গল্পের সঙ্গেই দৌড়াতে হবে, আগে ভাগে ভেবে নেওয়ার একদমই অবকাশ নেই। একজন পাঠকের দৃষ্টিতে বলব, সুস্মিতা জাফর প্রথম উপন্যাসেই দারুণভাবে সফল। - ফৌজিয়া খান তামান্না।
জন্ম ১১ ডিসেম্বর। জন্মভূমি ফরিদপুর হলেও বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকায়। পড়াশােনা করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ এ এম,বি,বি,এস পাশ করেছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তরে ‘জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশােনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্গত প্রতিষ্ঠান নিপসম থেকে। সুস্মিতা পছন্দ করেন। নতুন কিছু শিখতে এবং নানান রকম শৌখিন কাজ করতে। যুক্ত আছেন শিশু বিষয়ক সচেতনতা ও উন্নয়নে কর্মরত প্রতিষ্ঠান- ‘চাইল্ড সেন্ট্রিক ক্রিয়েটিভ সেন্টার এর সাথে মাত্র ৬ বছর বয়সে হােমওয়ার্ক খাতায় টুকটাক গল্প আর ছড়া লেখার সূত্রপাত। ১৯৯৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘কচিকাঁচার আসর’ এ প্রথম ছড়া এবং একই বছর দৈনিক প্রথম আলাে’র ‘গােলাছুট' এ প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। ২০০৭-১২ সালে ছড়া-কবিতা, গল্প মিলিয়ে প্রায় ৫০ এর অধিক লেখা দৈনিক পত্রিকা, রহস্যপত্রিকা, কিশাের তারকালােকসহ অন্যান্য মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশ হয়েছিল। ২০১২ সালে দৈনিক সকালের খবর ‘ভালােবাসা দিবস সংখ্যায় তার হঠাৎ ভালােলাগা গল্পটা প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। ভালােবাসেন সমসাময়িক এবং হরর গল্প লিখতে। এ পর্যন্ত তার লেখা মােট গল্পের সংখ্যা ৬০ এর ওপরে। তার লেখা প্রথম বই- ‘সােয়েটার প্রকাশিত হয়। পরিবার পাবলিকেশন্স থেকে ২০২০ সালে।