জীবনকে ভালোবেসে জীবনের রূপ, রস, রঙের সবটুকু স্পর্শ করার উদ্দেশ্যে ব্যাকুল হয়ে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে লানা নামের বাইশ বছরের প্রাণোচ্ছল এক তরুণী। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জীবনের প্রতিটি সূক্ষ্ম ধূলিকণা থেকেও সৌন্দর্য আহরণ করার মতো অসীম ক্ষমতার অধিকারী সে। অন্যদিকে, জীবনের উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে জীবন থেকে এক মাসের জন্য পালাচ্ছে কনক নামের আটাশ বৎসর বয়সী মৃদুভাষী, ভারিক্কী স্বভাবের, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন তরুণ। তার গন্তব্য নির্দিষ্ট। ঝুটঝামেলা এড়িয়ে একাকী নিরিবিলি ভ্রমণের লক্ষ্যে মর্নিং পারাবত এক্সপ্রেসের একটি ফার্স্ট ক্লাস কেবিনের সম্পূর্ণটি নিজের জন্য রিজার্ভেশন করে কনক। কিন্তু তার একাকীত্বের আয়োজনকে নস্যাৎ করতে আবির্ভাব ঘটে অনাহূত লানার। এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয় কনক। তবে, ঘটনাক্রমে টের পায়, সে অবিশ্বাস্যভাবে প্রেমে পড়েছে উড়ে এসে জুড়ে বসা অনাকাঙ্ক্ষিত সহযাত্রীর। জীবনের আটাশটি বছর শেষে এই প্রথমবারের মতো কেউ একজন ওলটপালট করে দিয়েছে কনকের অধরা হৃদয়ের গোটা মানচিত্র। অথচ মাত্র দেড় মাস পর তার বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়ে আছে! একপর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা হওয়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের দুই সহযাত্রীর মানসিকতা মিশে যায় এক বিন্দুতে। লানার সান্নিধ্যে কনক উপলব্ধি করতে পারে, সুখকে আপন করে পেতে চাইলে দুঃখকে ভালোবাসতে জানতে হয়। সময় থেমে থাকে না। সময় এগিয়ে নিয়ে চলে জীবনকে। বিস্মিত হৃদয়ে কনক ভাবতে থাকে, “যে জীবন লানার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, কীভাবে সেই জীবনের ত্রিমাত্রিক সৌন্দর্যকে সেঁচে বের করতে পারে এই মেয়েটি!!” জীবন থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে ছুটে চলা কনকের হৃদয়ে ভালোবাসার স্বর্গীয় অনুভূতি জাগানো লানা স্থির করে নিয়েছে তার গন্তব্য। দৃঢ়ভাবে প্রমিজ করেছে, বড়জোর তিনদিনের জন্য কনকের গন্তব্য হবে তারও গন্তব্য। সেই সূত্র ধরে আমরাও অপরূপ টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাবো লানা ও কনকের সাথে। সেখানে পাবো ভীষণ মায়াবতী এক মহীয়সী রমণী কুমুমা’কে; যার জীবন টাঙ্গুয়ার হাওরের চেয়েও বৈচিত্র্যময়। কুমুর আঁচলের ছায়াতলে শুরু হয় রূপকথার রাত্রির চমৎকার গল্প সাজানোর পালা। লানার প্রবল ইচ্ছে জাগে, শালুক ফোটা রাত্রি শেষে শিহরিত ভোরে তার বাপীকে (বাবাকে) রূপকথার রাত্রির অপূর্ব সুন্দর গল্পটি শোনাবে…!! অতঃপর…?
জন্ম ৪ নভেম্বর, চট্টগ্রামে । পতেঙ্গায় সাগরের প্রাণোচ্ছলতায় বেড়ে ওঠা লেখিকার পিতৃভূমি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর । পিতা মরহুম আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাতা মরহুমা রৌশন আরা চৌধুরী । তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন । শৈশব থেকে সাহিত্যে প্রবল অনুরাগ । ছাত্রজীবনে আবৃত্তি, নাটক, উপস্থাপনায় ছিলেন সাবলীল । খেলার ছলে লিখতে লিখতে কখন যে সাহিত্যের মায়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছেন তা বোধকরি নিজেও টের পাননি ! পাঠকের অফুরন্ত ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা তাঁর লেখার মূলশক্তি । সূক্ষ্ম জীবনদর্শন, পরিবেশ ও প্রকৃতি, আবেগের বিভিন্ন রূপ সহজেই তাঁর কলমের আঁচড়ে জীবন লাভ করে । এ কারণে লেখিকার গল্প, কবিতা, উপন্যাস খুব সহজে পাঠকহৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয় । দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা হলে দায়বদ্ধতা এড়াতে নিজেকে সখের লেখিকা হিসেবে পরিচয় দিলেও প্রকাশিত গ্রন্থগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করায় বর্তমানে পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ । ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু লিখেননা । সুস্থ ধারার সাহিত্যে বিশ্বাসী লেখিকা হৃদয়ের গভীর থেকে লিখতে ভালোবাসেন । তাঁর প্রতিটি লেখা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র ।