‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা করতে গিয়ে যে ইস্যুটি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য তা মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা জাতির মানুষকে কেন্দ্র করে দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা। মিয়ানমারের সামরিক-বেসামরিক শাসকগোষ্ঠী নির্বিশেষে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে চরম নির্যাতন চালাচ্ছে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বী রাখাইনদের নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করা হলেও উত্তর আরাকানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালী বলে নাগরিক হিসাবে বঞ্চিত করে আসছে মিয়ানমারের শাসকগণ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিচয়কে স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমার সরকারের অনিচ্ছা থেকে সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে। এই সমস্যা আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারি একটা ইস্যু। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি যেমন তেমনি বাংলাদেশ সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশের প্রতি এটি এক বিরাট হুমকি। ২০১৭ সালে নতুন করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনের পর বাংলাদেশ এক নিবিড় কূটনেতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক জনমত তৈরি করেও তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সমস্যা সমাধানে চীন, রাশিয়া ও ভারতের ভূমিকা আদৌ সহায়ক নয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা পালনে প্রভাবিত করতে পারার মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের সাফল্য নির্ভর করবে। এছাড়া এ সংকলনে আরও রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, কাশ্মীরের স্বতন্ত্র মর্যাদা, অক্টোবর বিপ্লব, বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা, জাতিসত্তার অধিকার, ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কিত প্রবন্ধসমূহ।
আকমল হোসেন ১৯৪৮ সালে ৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ৩৭ বছর অধ্যাপনা শেষে ২০১৫ সালে অবসর নিয়েছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং চেক রিপাবলিকের ইনস্টিটিউট অব স্টেট অ্যান্ড ল থেকে ১৯৭৭ এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণা ও অধ্যাপনার বিষয় হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা। আকমল হোসেন ভারত ও জাপানে ভিজিটিং প্রফেসর ও গবেষণা ফেলো হিসাবে কাজ করেছেন। দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক সেমিনারে নিয়মিত অংশ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কাউন্সিল সদস্য ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষের বাইরে তিনি একজন পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্ট হিসাবে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রাম এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সভাপতি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, জ্বালানী নিরাপত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকনীতি; রাজনীতি সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্রনীতি; Bangladesh Neighbours in India North East: Exploring Opportunities and Mutual Interest (ed.) এবং ‘কাশ্মীর দেশীয় রাজ্য থেকে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল প্রলম্বিত সংকটের আখ্যান’ অন্যতম।