জায়োনিস্টরা মুসলিম নিধনে বেশ তৎপর। ওদের ষড়যন্ত্রও বেশ গুরুতর। ফিলিস্তিন নিয়ে আমাদের সবার মনেই আবেগ-ভালোবাসা উপচে পড়ে। বাইতুল মাকদিসে হাইকেলে সোলাইমানী নির্মাণের জায়নবাদী পরিকল্পনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। মেহরাবে দাউদ আর সাখরায়ে ইয়াকুবের বরকতময় শহরে ইহুদিদের নাপাক স্পর্শ আমাদের হৃদয়াত্মায় অশ্রু ঝরায়। কিন্তু আমরা কজন জানি এ শহরের ইতিহাস, বৃটেনের প্রতারণা, মুসলিম দেশগুলোর হঠকারিতা, ইহুদি বসতি নির্মাণ, বারবার শান্তি আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ ও ইসরাঈলি বাহিনীর নির্মমতার খুল এবং মুসলিম উম্মাহর প্ল্যাটফর্ম ও আই সির নাটকীয়তা সম্পর্কে? পাঠক আফসোস করবেন শরীফ হুসাইনের নির্বুদ্ধিতা ও হঠকারিতা দেখে। পরক্ষণে আশাবাদী হবেন শাইখ ইজ্জুদ্দীন আল কাসসামের প্রতিরোধ দেখে। পাঠক জানতে পারবেন ইসরাঈলি বসতি স্থাপনের ইতিহাস। হাগানাহ, ইরগুন স্টার্ন গ্যাংয়ের নির্মমতা তাকে স্তব্ধ করে দিবে। ছয়দিনের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে আরবদের ব্যর্থতা পাঠককে হতাশ করবে। কারামা যুদ্ধ ও রমজানের যুদ্ধের ইতিবৃত্ত পাঠ করে পাঠক অনুধাবন করবে এসব যুদ্ধের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক ছিল না। যোদ্ধারা উজ্জীবিত ছিল আরব জাতীয়তাবাদে। তারা প্রেরণা খুঁজে পায় উম্মে কুলসুমের গানে।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।