বাঙালী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত গবেষণা ও ব্যাখ্যায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আত্মনিবেদিত। সে আগ্রহও এই বইটিতে উপস্থিত। তিনি জানিয়েছেন, বাঙালীর জাতীয়তাবাদ আত্মরক্ষামূলক। এর মধ্যে রয়েছে আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা। কিন্তু তার অগ্রগমনের পদে পদে বৈরিতা ছিল। আক্রমণগুলো বিশেষভাবে এসেছে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই। পাকিস্তান-আন্দোলনে বাঙালী মুসলমান অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছে, মুক্তির স্বপ্নে। তবে তা ভাঙতে বিলম্ব ঘটেনি। প্রথম আঘাতটা এসেছে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। বোঝা গিয়েছিল, উর্দু ভাষাকে কেন্দ্রে রেখে পাকিস্তানী নামে নতুন জাতি সৃষ্টির স্বৈরাচারী ও অবাস্তব আকাক্সক্ষা রয়েছে অবাঙালী শাসকদের। বাঙালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় ছিল না। এ বইয়ের আটটি অধ্যায়জুড়ে বাঙালীর জাতীয়তাবাদী উদ্বেগ ও অগ্রগমন-প্রচেষ্টার কাহিনী রয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে সক্রিয় ব্যক্তিদের প্রতিনিধি ও দৃষ্টান্ত হিসেবে আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এখানে উপস্থিত রয়েছেন। লেখকের হৃদয়গ্রাহী বর্ণনায় এঁদের কাজের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী শঙ্কা ও প্রতিরোধের কয়েকটি জরুরী দিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিটি অধ্যায়ের পেছনে গবেষণালব্ধ তথ্য রয়েছে। যেগুলো তত্ত্বের একটি রেখাবয়বও তৈরী করে দিয়েছে। বইটি বাঙালীর জাতীয়তাবাদের অতীত ও বর্তমান তো বটেই, ভবিষ্যৎ অনুধাবন এবং পাঠককে নিজের মতো করে বিষয়টি সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধকরণে সহায়ক হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।