উনিশ বাহান্নতে নিজের ভাষার মর্যাদা রাখতে রাজপথে রক্ত দিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি এ দেশের মানুষ। মায়ের ভাষার প্রতি এই আত্মত্যাগের গর্বিত মালিক শুধু বাঙালি জাতি-পৃথিবীর আর কোনো দেশ এই অহংকার করতে পারে না। কিন্তু যে ভাষার জন্যে আমাদের পূর্বপুরুষ জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, সে ভাষার মর্যাদা আমরা কতটুকু রাখতে পারছি? পারিনি, চেষ্টাও করছি না! সরকারিভাবে সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল শব্দপ্রয়োগ, ভুল বাক্যগঠন, ভুল বানান এবং বেতার ও টেলিভিশনে ভুল উচ্চারণ এখন যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে! বাংলা একাডেমি এবং বাংলাভাষার চর্চা যারা করছেন, তারাও যেন অনেকটা নির্বিকার। লেখক-প্রকাশকদেরও যেন কোনো দায় নেই! যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই এই বিষয়টিতে! তবে কারো-কারো দায় এসে যায়। সমাজে সে ধরনের লোক কম হলেও দু-একজন বাজি ধরতেই পারেন যে, বাংলাভাষা নিজে শুদ্ধ করে লিখবেন এবং অপরকেও লিখতে উদ্বুদ্ধ করবেন। তেমনি একজন সাদামনের মানুষ সঞ্জয় মুখার্জ্জী। তিনি একাধারে কবি, শিশু সাহিত্য, উন্নয়নকর্মী এবং বাংলা বানান বিষারদ হিসেবে ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি অনলাইন মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চেষ্টা করে যাচ্ছেন শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে এবং অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে। এই প্রচেষ্টার অংশহিসেবে সঞ্জয় মুখার্জ্জী ২০২০ বইমেলায় প্রকাশ করেছিলেন বানানবিষয়ক বই ‘ছন্দে লিখি বানান শিখি’। বইটির ব্যাপক চাহিদার পর ২০২১ সালের বইমেলায় তিনি বানান বিভ্রাট নিয়ে প্রকাশ করেছেন ‘দুরন্ত সংলাপ’ প্রথম খÐটি। এ বইটি জলছবি প্রকাশনের বেস্ট সেলারের মর্যাদা লাভের পর পাঠকের অনুরোধে তিনি দুরন্ত সংলাপ-এর দ্বিতীয় খÐ প্রকাশ করতে মনোনিবেশ করেন। ব্যাকরণকে বাদ দিয়ে শুধু বানান শেখার বই বাংলাভাষায় আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না। আশা করছি ‘দুরন্ত সংলাপ’ দ্বিতীয় খÐ বইটিও অপরাপর বইগুলোর মতোই পাঠকপ্রিয়তা পাবে।
সঞ্জয় মুখার্জীর জন্ম ১৬ আগস্ট, ১৯৮৯ রংপুরে।শৈশব কেটেছে ঢাকায়, কৈশোর রংপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থকে অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর, বি) ছাত্রাবস্থা থেকেই শিক্ষকতার প্রতি প্রবল আকর্ষণের কারণে পরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে সেখানেই শিক্ষকতা করছেন্ ভালোবাসেন শিখতে, শেখাতে, লিখতে, বাশিঁ বাজাতে আর খেলাধুলা করতে। অনেক স্বপ্ন রয়েছে তার। স্বপ্নগুলো লালন কারে চলেছেন, একদিন ডানা মেলে আকাশে উড়িয়ে দেবেন বলে।