দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে দুই পরাশক্তি মুখোমুখি হয়ে পড়ে, এবং গোটা পৃথিবীকে ভাগ করে ফেলে দুই বলয়ে। আমেরিকা আর সোভিয়েত রাশিয়া। বিশ্বরাজনীতিতে এই লড়াই ‘কোল্ড ওয়ার’ নামে পরিচিত। একদিকে আমেরিকা চাচ্ছিল গণতন্ত্র আর ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে সারা দুনিয়া দখল করতে, অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়া চাচ্ছিল পুঁজিবাদ নিপাতের নামে সব লালে লাল করে দিতে। কিন্তু চুপিচুপি চক্রান্ত আর কতদিন, অবশেষে ১৯৫০ সালে তাদের এই যুদ্ধে বারুদ ঢালল উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করা দুই কোরিয়া। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই চুলোচুলি মান্টোর দিলে প্রচণ্ড আঘাত করে। ভারতভাগের ক্ষত তখনও শুকায়নি। একটা দেশের মাঝখানে বিবাদের দেয়াল টেনে দেওয়া যে কতটা বেদনাদায়ক, মান্টোর চেয়ে একথা কে ভালো জানেন! মান্টো তাই কলম ধরলেন। কিন্তু অভিযোগের স্বরে নয়, কোরিয়ার যুদ্ধের বেদনাকে তিনি বয়ান করেন অন্য এক স্বরে, তীব্র খোঁচা মারা এক ভঙ্গিতে। পাঠক পড়তে পড়তেই আবিষ্কার করবেন এই ‘ভিন্ন প্রতিভার’ মান্টোকে। আঙ্কেল স্যাম আর কেউ নন, আমেরিকারই ডাকনাম। চাচার নামে মান্টোর এই চিঠিগুলোর প্রতিটি শব্দে একই সাথে মিশে আছে গভীর বেদনা ও সূক্ষ্ম রসবোধ। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে স্পষ্ট হয়ে যাবে ১৯৫১ থেকে ২০২১ অবধি আমরা একই সত্যের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। কোনো ব্যতিক্রম নাই, বিশ্বমোড়লদের হাতে আমরা যেন ‘সিসিফাসের’ ঘুঁটি!