গল্পটি ঠিক গল্প নয়, কঠিন জীবন সত্য। শেষ ফাল্গুনের বেলায় অনেক্ষণ পথ চলতে চলতে ছেলেটির তেষ্টা পেয়েছিল। বয়স তার ১৩ কী ১৪ বছর! রাস্তার ধারে বড়সড় একটি মন্দির। পানি পান করতে সেখানে ঢুকে সে। বেধরক মার খায় ছেলেটি। তার অপরাধÑ সে ধর্মে মুসলমান। মন্দিরের দরজায় পরিষ্কার লেখা আছে,‘হিন্দু ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ’। ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের ঘটনা এটি। মারধরের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্দিরের কর্তারা সাফ জানিয়ে দিলেন, তাদের মন্দিরে ‘ওরা’ ঢুকবে না, ব্যাস! কিন্তু গল্পের এখানেই শেষ নয়। সংবাদপত্র এগিয়ে চলে; ক্যামেরার সামনে আসে মার-খাওয়া কিশোরের স্বজনরা। তার দিনমজুর বাবা নিচু গলায় ছেলেরই দোষ স্বীকার করে নেনÑ লেখাপড়া জানে না, তাই লেখাটি বুঝতে পারেনি। গাজিয়াবাদের ওই অসহায় শ্রমিক পিতার মিনতি যখন বাতাস ভারি করছিল, ঠিক তখনই তার পাশে কারা যেন একজন-দু’জন করে জড়ো হতে লাগল। পাশে এল কিছু মেয়েও। কেউ স্বজন, কেউ প্রতিবেশী, কেউ সমাজকর্মী। সংবাদমাধ্যমে বাবার মুখে মুর্খ ছেলের ভুল করে মন্দিরে প্রবেশের কথা শুনতে শুনতে তারা অচিরেই অস্থির হয়ে ওঠে। বাবাকে থামিয়ে দিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠেÑ বাচ্চা কোনো ভুল করেনি। পানি তেষ্টা পেয়েছিল, পানি খাবে না! মন্দির হোক, মসজিদ হোকÑ কী আসে যায়? এ মেয়েদের কন্ঠে কোনো সংশয় ছিল না, একফোঁটা ভয় ছিল না; গরিব ঘরের এ মেয়েদের তীব্র এবং ¯পষ্ট উচ্চারণ শুনতে শুনতে মনে হয়েছে এ জোরটাই আমাদের আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ জোরটাই প্রয়োজন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে।