"পিতা"বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পিতা কী তা নিজে পিতা হওয়ার আগে এ সংসারে কয়জনই বা বুঝতে পারে! 'পিতা' উপন্যাসের মৌলানা শফিকও তা বুঝলেন। তিনি যখন পিতা হলেন, কিন্তু ততদিনে বড় বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল।
মৌলানা আহমেদ ফয়েজি আর সাধন কুমার আচার্য দুই হতভাগ্য পিতা। বিধর্মী বিয়ের দায়ে তাদের দুই নয়নের পুত্তলী পুত্রকন্যাকে তারা সমাজের চাপে ত্যাজ্য করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পিতার মন! সমাজকে ফাঁকি দিয়ে তারা অনুসরণ করে পলায়নপর দুই সন্তানকে। একবার পায় আবার পায় না। তারা চষে বেড়ান দেশে. দেশের বাইরে- তাঁদের পিতৃপুরুষের আদি ভূমি ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে- নয়নহারা নদীর তীরে তীরে। কখনোবা সন্তানদের খোঁজে জীবনবাজি রেখে তীর্থযাত্রায় যান হিমালয়ের শৈলশিখরে। ক্লান্ত বিপর্যস্ত দুই পিতা হিমালয়ের গিরি সংকটে লাফ দিয়ে গঙ্গা প্রান্তির মুহূর্তে তীর্থযাত্রীর দলে লুকিয়ে থাকা সন্তানের ডাক শুনতে পান, কিন্তু দেখতে পান না। দেশে ফিরে সন্তানের অপেক্ষায় বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়, দেখা আর হয় না। এদিকে দুই সন্তান সমাজ থেকে লুকিয়ে তাদের পিতাদের দেখে আসে নিয়মিত। প্রতিবার ছদ্মবেশে পিতাদের দেখতে যায় আর পিতার ঐশ্বরিক অনুভূতি নতুন নতুন দ্যোতনা নিয়ে তাদের মর্মমূলে প্রবেশ করতে থাকে । সন্তানের সঙ্গে পিতার এই মর্মস্তদ লুকোচুরি খেলা একদিন শেষ হয়। দুই সন্তান তাদের নিজেদের সন্তান জন্ম হওয়ার দিনে তারা তাদের সমস্ত ছদ্মবেশ ছিন্ন করে পিতার সামনে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু তা বড় বেশি দেরি হয়ে যায়। পিতার সঙ্গে সন্তানের ঐন্থী সম্পর্কের মর্মস্পর্শী বর্ণনা এ উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে অনুরণিত। আর এ অনুরণন হয়েছে ললিত কোমল। ভাষার মৃদঙ্গে, হৃদয়হরা প্রকৃতির অনুষঙ্গে এবং অতি অবশ্যই তার সমাপ্তি হয়েছে করুণ রসের লোনাজলে। করুণ কোমল কাহিনির বর্ণনায় এমন হৃদয়ভাঙ্গা ভাষা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
Foyez Tauhidul Islam লাইভ স্যাইন্স, ডিপ্লোম্যাসি, ভাষাবিজ্ঞান ও সুফীতত্ত্বের মতো বিষয়ের বোদ্ধা পাঠক, লেখক ও গবেষক। উদ্দাম, ফেনীলোচ্ছল গদ্যে তিনি জটিল মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় উপস্থাপনে পারদর্শী। বিভিন্ন ভাষার উপর তাঁর দক্ষতা ও ব্যাপক কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা সংবেদনশীল বিষয়কে অবিতর্কিতভাবে উপস্থাপনে তাঁকে মুন্সীয়ানা দান করেছে। এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ফয়েজ তৌহিদুল ইসলামের। পিতা-মাতা উভয়েই সুফী ঘরানার সাধক হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই গুপ্তবিদ্যা, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ব্যাপক অধ্যয়ন ও অনুধ্যানের সুযোগ পান। তাই নিজে কঠোর রক্ষণশীল ধর্ম চর্চাকারী হলেও তাঁর লেখায় উদারনৈতিক মতবাদ ফল্নুর মতো প্রবহমান। তাঁর চিন্তা ও লেখায় এসবের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পড়াশোনা ও চাকরি সূত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষত আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ তিনি। এসব অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞান তাকে কাব্যময় গদ্যের এক মননশীল লেখকে পরিণত করেছে। ২০১৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত “ইহকালে এইসব হয়” তাঁর বিপুল সমাদৃত উপন্যাস।