কবিদের দেখলে বিস্ময়ে শ্রদ্ধানত হই, যাঁরা কবিতা রচনা করেন তাঁরা যেন বিশ্বজয়ী, কবিতার মর্মের জগৎ তো রমণীর মতো রহস্যাবৃত। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এ বিশ্বাসের পক্ষে। কবিতাকে আয়ত্তে আনতে পারা দুর্লভ দুর্জ্ঞেয়কে পোষ মানানোর মতো। কবিতাগ্রন্থে তিনটি কালপর্ব আছে, সময়জ্ঞাপক এই কাল হলো ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ যদিও এসবের অন্তর্নিহিত ভাবনা একই সূত্রে গাঁথা। দুহাজার উনিশের শেষ থেকে করোনা সংহারক মূর্তিতে ধেয়ে আসছে, কবির অবচেতনে তার বারতা হয়তো পৌঁছে গেছে। তাই তিনি স্বর্গের গঙ্গা মন্দাকিনীকে স্মরণ করলেন ২০১৯ এর আঠারোই অক্টোবর, আবার ২/১২/২০১৯ এ ওড়ালেন নিজের জন্মদিনকে স্মরণ করে নবজীবনের কেতন। হৃৎপিণ্ডের মহাযাত্রা করোনা ২০২০ তে এসে অবজ্ঞেয় কবিতায় মানব জীবনের প্রকৃতির ছন্দ আর করোনা আক্রান্ত মানুষকে দিলেন বরাভয়-এর সংবাদ। স্মৃতিবেদনার অশ্রুজলে কবি রোমন্থন করেছেন ফেলে আসা পরমায়ু। উচ্ছ্বাসে অরণ্য কবিতায় প্রকৃতিচারিতা অনবদ্য। বেদনার রেখা প্রতিটি মানুষকে একবার না একবার ফিরে দেখতে হয়। সে পথ অজ্ঞাত। কবি তার সন্ধান হয়তো পাননি। এমনিভাবে আশা-নিরাশার চক্রবালে আবর্তিত কবি। স্মৃতিময় ছেলেবেলা, এপ্রিলের প্রলয়ে কোথায় যেন মুখ লুকিয়েছে। হতচকিত কবি, ইহজাগতিক কথাকার আনিসুজ্জামান স্যার স্মরণে, প্লাবন, পুতুলের সংসার ইত্যাদি কবিতায় কবি প্রকৃতি ও জীবনকে রসময় করে একই সূত্রে গেঁথেছেন। এতসবের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কবি ১৫ই অগাস্টের মর্মন্তুদ ঘটনার কবিসুলভ বর্ণনা দিয়েছেন। ঝুলন্ত ব্যাগে বিপুলা পৃথ্বি, জাগালে বিস্ময় কবিতাগুলোর রহস্য খুঁজতে গিয়ে পাঠককে বিস্ময়াভিভূত হতে হয়। তিনি রয়েছেন ‘ক্লান্তিহীন পথিক’ তাই তিনি কবিতা ভুবনের অধিকতর বিস্ময় রবীন্দ্রনাথকে ভুলেন কি করে, তাঁর বাণীর বিমূর্ত ‘ঝংকার ঝরঝর ঝরনার মতো’ নিরন্তর ধ্বনিত হচ্ছে নিখিলময়। কবি লোকমানের কবিতার ভুবন ভ্রমণ করে ‘আরো চাই’ এর একটা অতৃপ্তি যেন রয়ে গেলো। কাব্যখানি পাঠ করে স্বাদ পেলাম আনন্দের, আশা করছি পাঠকও আনন্দ পাবেন। প্রফেসর গোলাম কবির