বেড়া পাবনা জেলার একটি প্রাচীন বন্দর ও বর্তমানে উপজেলা। অষ্টম শতকের দিকে এ বন্দর প্রতিষ্ঠা পায়। তখন আরব বণিকরা এ বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নৌযান ভেড়াত। বেড়ার নামকরণের ভিতরেও এর প্রাচীনত্ব লুকায়িত রয়েছে। আরবি শব্দ ‘বেড়হা’ মানে বন্দর। আরব বণিকদের মুখে এই ‘বেড়হা’ থেকেই বেড়ার নামকরণ হয়। বেড়া উপজেলার মধ্যে মথুরা, সাধুগঞ্জ ও নাকালিয়াও প্রাচীন বন্দর ছিল। বন্দর নগরীর জাঁকজমকতার জন্যই ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে মথুরায় থানা স্থাপিত হয়। যমুনা নদীর কবলে পড়ে মথুরা ভেঙে গেলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মথুরা থানা স্থানান্তরিত হয় বেড়ার শম্ভুপুরে। নাকালিয়া ও তার পাশে অবস্থিত সাধুগঞ্জও জাঁকজমকপূর্ণ নৌবন্দর ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা ও আসাম থেকে বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযান এসে নোঙর করত এখানে। এখানে আমদানি হতো আলকাতরা, কেরোসিন, লবণসহ বিভিন্ন পণ্য এবং রপ্তানি হতো পাট ও পাটজাত বস্ত্র (গুন)। এখানে পাটের অনেক গুদামঘর বা পাটের কুঠি ছিল। সুসাহিত্যিক বাণী রায়ের পৈতৃক বাড়ি এ নাকালিয়াতেই। তখন বেড়া সদরের চেয়ে নাকালিয়াই বেশি পরিচিত ছিল। বর্তমানে নাকালিয়ার আর আগের জৌলুস নেই। সাধুগঞ্জ অনেক আগেই যমুনা গর্ভে বিলীন হয়েছে। হাটুরিয়া গ্রামে তেরোজন জমিদার ছিলেন। তাদের সরাসরি কলকাতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। তাদের দোর্দÐ প্রতাপের কথা এখনো মানুষের মুখে প্রচলিত রয়েছে। তাদের স্থাপনা অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু একটি মন্দির (শ্যামরায় মন্দির) ও জমিদার ক্ষীরদচন্দ্র রায়ের জীর্ণ বাড়িটি এখনো জমিদারের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে চলছে। ভারেঙা গ্রামটি জমিদার আমল থেকেই শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ উন্নত ছিল। পাবনা জেলা তথা বেড়ার সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ‘ভারেঙা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ সালে। প্রখ্যাত কবি অমিয় চক্রবর্তীর পিতামহ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ গ্রামেই পৈতৃক নিবাস ছিল বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক, সাহিত্যিক মণীশ ঘটক ও মহাশ্বেতা দেবীর।