ভার্চুয়াল প্রেম ও লেখক প্রসঙ্গ বেগম জাহান আরা’র লেখা পাঁচ নম্বর বই প্রকাশ করছি। এর মধ্যে ১টি বাংলা বানান গবেষণা, ৩টি উপন্যাস এবারেরটি হলো ছোটো গল্প। তাঁর লেখার যে দিকটি আমাকে প্রবল আকর্ষণ করে তা হলো পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া অব্দি পিপাসা থাকে। একটা গল্প পড়লে মনে হয় পরেরটা পড়ি। গল্পের চরিত্রগুলো খুব চেনা জানা কাছের মানুষের। কখনো কখনো মনে হয় আমি নিজেই গল্পের কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। জীবনের পরিশেষে প্রেম-ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে, দেওয়াতেই প্রকৃত সুখ। ‘ভার্চুয়াল প্রেম’ বইয়ে বেগম জাহান আরা সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন। কিন্তু লাভ-ক্ষতির এই পৃথিবীতে সে দৃষ্টান্ত ধরে রাখা বিরল। বিংশ শতকের আগে এ দেশের মানুষের ভাবের বহিঃপ্রকাশ, প্রেম আদান-প্রদান অপ্রকাশিত থেকে যেতো। অথবা অপেক্ষার পর অপেক্ষা শেষে কখনো কখনো সেই ভাব বিনিময় হতো চিঠিতে, সেও ছিল দুঃসাহসিক। কিন্তু স্মার্টফোনের যুগ মানুষের সেই দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে, নিজেকে প্রকাশ করা সহজ করে দিয়েছে। নারী-পুরুষকে করেছে সহজে অন্তরঙ্গ। সবি হয়েছে জীবন যাত্রার মান বিবর্তনে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ভ‚মিকায়। অথচ এই ভাব বিনিময়, দ্রæত কাছাকাছি আসা ক্ষণিকের মোহ ছাড়া কিছু নয়। পরিণত বয়সে একপাক্ষিক জীবনের শুরু এখান থেকেই। জীবনের গণিত ভুল হলে একটা সময় ক্ষণিক জীবনের, ঘনিষ্ঠতার ফলাফল থেকে যায় শূন্য। এক জীবনের সমীকরণ মেলানো বড়ই কঠিন। জীবন সমীকরণের পুরো অংশে থাকে বাবা, মা, প্রিয়জন, প্রিয়তম-প্রিয়তমা, সন্তান-সন্তুতি, স্বামী-স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজন আর কর্মময় দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা। এসব সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে থাকে দায়িত্ব, কর্তব্য, ত্যাগ, ভালোবাসা, অভিমান, অভিযোগ, আদর-¯েœহ ইত্যাদি নানান রকম শব্দ। বেগম জাহান আরা এর লেখা ‘ভার্চুয়াল প্রেম’ বইটি মূলত জীবনের এই সকল শব্দেরই মর্মার্থ উপাখ্যান, জীবনের ভাঙা-গড়া, সুখ-দুঃখ, উত্থান পতনের গল্প। গল্প যারা ভালোবাসেন তারা বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলবেন বোধ করি। বইটি প্রকাশের আগের কথা: বেগম জাহান আরা বহুমাত্রিক লেখক ও ভাষাবিজ্ঞানী। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘অভিবাসী’, ‘কত অচেনারে’, গবেষণাগ্রন্থ ‘প্রমিত বাংলা বানান: সমস্যা প্রসঙ্গ’ এবারের বইমেলা অর্থাৎ ২০২২ এর অমর একুশে বইমেলায় জনপ্রিয় উপন্যাস ‘উজান ভাটি’ প্রকাশের পর ‘ভার্চুয়াল প্রেম’ প্রকাশের কাজ করছি। বইটি মুদ্রণের জন্য চ‚ড়ান্ত করে ২৩ ফেব্রæয়ারি ২০২২ বেগম জাহান আরা’কে ফোন করেছিলাম। ২৩ ফেব্রæয়ারি। তিনি জানালেন হাসপাতালে সিসিইউতে। প্রæফ শেষ হয়েছে শুনে তিনি বললেন প্রেসে দিয়ে দাও। বাকিটা তুমি দেখে দিও। তাঁর শারিরীক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমি আর কথা বাড়ালাম না। জিজ্ঞেস করার দরকার ছিল বইটিতে উৎসর্গ পাতায় কী লিখবো! ২ মার্চ পর্যন্ত অনেকবার তাঁর শারিরিক অবস্থার খোঁজ নিতে ফোন করেছিলাম। কোনো উত্তর পাইনি! আশা করছি তিনি সুস্থ আছেন। শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন। বইয়ের খোঁজ খবর নেবেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন লেখক কপি কবে পাঠাব?... সাকিল মাসুদ প্রকাশক
ড. বেগম জাহান আরা। জন্ম : ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭ সাল, রাজশাহী। এম.এ. (বাংলা, প্রথম শ্রেণি, প্রথম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়); বি.এড (প্রথম শ্রেণি, প্রথম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়); এম.এসসি. (ভাষাবিজ্ঞান, এক বছর মেয়াদি ডিগ্রি, প্রথম শ্রেণি, পুনে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত); পিএইচ.ডি. (ভাষাবিজ্ঞান, পুনে বিশ্ববিদ্যালয়); অধ্যাপনা : আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৫-২০০১); অধ্যাপনা : ইউল্যাব, ঢাকা। (২০০৭-২০১৪)। উচ্চারণের ১২টা পাঠ নিয়ে ৩টা পূর্ণ ক্যাসেট, ১টা সিডি, দূরশিক্ষণের মডিউল পাঠসহ উচ্চারণের ক্যাসেট করেছেন। সাংবাদিকতা : বাংলার বাণী (১৯৭৩-৭৫), সংবাদ (১৯৭৫১৯৭৯)। রেডিও টেলিভিশনে প্রমিত বাঙলা’র গবেষণামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন (১৯৭৩-২০১৫); রেডিও টেলিভিশনে নজরুল গীতি পরিবেশেন করেছেন (১৯৭৩-১৯৮৩)। উপন্যাস, ছােটগল্প, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, গবেষণাগ্রন্থ ও পাঠ্যপুস্তক মিলিয়ে প্রায় ১০০টি গ্রন্থ প্রকাশিত। পুরস্কার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধা পুরস্কার; ভাষাবিজ্ঞানি সম্মাননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কেন্দ্রীয় লালন পরিষদ পুরস্কার; দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ ফাউন্ডেশন পুরস্কার; কমর মুশতারি স্মৃতি পুরস্কার, সংগীতে ১০টি সােনার পদক ও ২০টি রুপাের পদক ইত্যাদি। এখনও সক্রিয় আছেন বাংলা ভাষার গবেষণায়। বর্তমানে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ, প্রমিত বাংলা বানান এবং প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ তাঁর গবেষণার বিষয়। পত্র-পত্রিকায় লেখেন নিয়মিত। ব্যক্তিজীবনে বন্ধুসুলভ, সংগ্রামী ও পরিশ্রমী ।