ইউসুফ মুহম্মদ সুনির্মল দোঁহার কবি, সন্তজন। শব্দের সুষমভাবের সুবিন্যস্ত ঋষি; এটি-ই আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। গত শতকের আশির দশকের শুরুতে প্রথাগত বাংলা কবিতা দিয়ে ভ্রমণ শুরু হলেও শূন্য দশক থেকে ভিন্ন আবেগ ঋদ্ধ অনুভূতির জ্বলৎ দোঁহাকার। ইউসুফের দোঁহা উড়ন্ত সসারের মতো মেঘ ও আরশে গিয়ে বৃষ্টি নামায়। দোঁহার ভাবাবেগ শব্দানুভূতির কাব্যিকে নির্যাস যেন ঊর্ধ্ব ও মর্ত্য থেকে আসে। ফলে, রক্ত পানি নয়, পানি-ই রক্ত হয়ে সংরক্ত অনুভূতি গভীর জীবনবোধের রূপান্তরিত সত্য। ভাববাদ-ভক্তিবাদ-মরমিবাদ-প্রেমে গতনিদ্র ইউসুফ কবির দোঁহা আনন্দিতদ উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। ভক্তিবাদ যেমন চড়চড়িয়ে ওঠে তেমনি তারই নিরিখে জন্ম নেয় ধর্ম-বর্ণ গোত্রহীন অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ। উপরোক্ত কবিতা বইয়ে শরীকান থাকে যেমন আল্লাহ, তেমনি ঈশ্বরের বহু ভজনা ও মানবকল্যাণ। এই দোঁহা কখনো দুই পঙক্তির। আবার কখনো রামনি দোলার চোয়পায়ি শব্দের গান; পদের গুরুত্বদ বয়ানে চারপদ ছাড়িয়ে বারো অথবা ততোধিক। ভারতবর্ষে কবির এর দোঁহা হিন্দি ভাষার নাগরি লিপিতে জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানে ছিল মতাদর্শ, উপদেশ ও অসাম্প্রদায়িক মানুষের মন্ত্রদল। ইউসুফের দোঁহা নিজের ভাষার ঐতিহ্যিক বিশ্বাসে ভরপুর। এখানেও সমন্বিত মানুষ দেখি, আবার খুব সাম্প্রদায়িক ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার অনুষঙ্গও লক্ষ্য করি। লক্ষ করি সমশ্রেণির মানুষের একত্র বন্দনা। দোঁহা প্রবহমান সর্বমানবতার অভিমুখে খাপ খাওয়া মানুষের চেতনায়। কেন্দ্রশাসিত প্রচল কবিতার বিপরীতে ইউসুফ মুহম্মদ এর দোঁহা সুরময় ছন্দবদ্ধ স্বতন্ত্র মানব সংগীত। ইউসুফ মুহম্মদ এর দোঁহার চিত্র বিন্যাস করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত শিল্পী অভিজিৎ মুখার্জি। অতিমারির দুঃসময়ে নতুন সামাজিক বাস্তবতায় তিনি দুর্দান্ত শিল্প দর্শন বিভাসিত করেছেন। অনবদ্য নান্দনিক ছোঁয়া চিত্রগুলোতে নানামাত্রিক স্বপ্ন কল্পনা, ধরা ও অধরা জগৎ উন্মোচিত হতে দেখেছি। শিল্পীর সুশৃঙ্খল রৈখিক চিত্রানুগ ভাব-বিম্ব দোঁহার ভাব-বিষয় ও বোধের উজ্জ্বল উৎসার। রিজোয়ান মাহমুদ