নাটোরের নলডাঙ্গা। সাজানো গোছানো ছবির মতো ছিমছাম সুন্দর একটি জায়গা। কে জানে, জীবনানন্দের বনলতা সেন হয়তো এখানেই কোথাও মায়াবী চোখ তুলে তাকিয়ে আছেন এখনো। বছর কয়েক আগেও এখানে ছোটোখাটো একটি রেলস্টেশন ছিল। সময়ের ফেরে সরকার বদলের সাথে সাথে বদলে যায় নলডাঙ্গার চেহারা। এখন আর এটি স্রেফ রেলওয়ে স্টেশন নয়, পেয়েছে থানা শহরের মর্যাদা। থানা হলে কী হবে, অজপাড়া গাঁয়ের সেই আদুরে ভাবখানা এখনো পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। নলডাঙ্গা নদীর দু’পাড়ে দুখানা বর্ধিষ্ণু লোকালয় গড়ে উঠেছে। একপাশে নলডাঙ্গা, অপর পাড়ে ঠুনিভাঙা। কেউ কেউ অবশ্য মজা করে মাথাভাঙা নামেও ডাকে। এই তল্লাটে কে কবে কার মাথা ভেঙেছিল কে জানে! ঠুনিভাঙায় মেরাজ ফকিরের বাড়ি। নামে ফকির হলেও সে কিন্তু মোটেও ফকির বা মিসকিন টাইপ মানুষ নয়। মেরাজ ফকিরের পূর্বপুরুষরা রীতিমতো জমিদার ছিলেন। এই তল্লাটে সবাই তাদের একনামে চেনে। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর লোকলস্করে চৌচালা বাড়ি সারাক্ষণ গমগম করত। এখন অবশ্য আর সেসব কিছু নেই। মেরাজ ফকিরের বাপ নায়েব আলি কঠিন অসুখে পড়ে জোতজমি সব খুইয়েছেন। অসুখ থেকে সেরে উঠতে না উঠতেই আবার এক জটিল ফৌজদারি মামলায় ফেঁসে যান। কথায় বলে টাকার লোভ বড়ো লোভ। পুত্রশোক ভোলা যায়, কিন্তু টাকার শোক ভোলা কঠিন। তামার বিষে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়! কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে মামলায় জিতলেন বটে, তবে ততদিনে তার জমিদারি আর নেই। টাকা টাকা করেই শেষে একদিন ফেঁসে গেলেন জমিদার নন্দন নায়েব আলি। মারা যাবার আগে রেখে যান কিছু ধানিজমি আর একমাত্র পুত্র মেরাজকে।