জার্মানদেশের কৃষকযুদ্ধ ১৮৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীকালে শ্রমজীবি মানুষের বিশেষতঃ দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকশ্রেণীর বিদ্রোহ ও সংগ্রাম বোঝার জন্য সারা পৃথিবীতে এটি একটি আকর গ্রন্থ হয়ে উঠে। এছাড়া শ্রমজীবি মানুষের লড়াই ও বিপ্লবের যে চিরায়ত আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতীক ব্যাকরণ কার্ল মার্ক্স ও ফ্রিদরিখ এঙ্গেলস রচনা করেছেন, তা বোঝার জন্যও জার্মানদেশের কৃষকযুদ্ধ একটি আদর্শ নমুনা। মূলতঃ ১৮৪৮ সালের ফরাসী বিপ্লবের সাথে ১৫২৫ সালে সূচিত হওয়া জার্মানদেশের কৃষকযুদ্ধের সাদৃশ্য ও পার্থক্য বোঝার জন্য এঙ্গেলস এই বই রচনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে মানব ইতিহাসে শ্রমজীবি মানুষের লড়াইয়ের সফলতা ও ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ধর্মতাত্বি ন ক ও ঐতিহাসিক ভিলহেল্ম সিমারমানের বই ‘মহান কৃষকযুদ্ধের সাধারণ ইতিহাস’ (Allgemeine Geschichte des großen Bauernkrieges) থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলেও মূলতঃ এঙ্গেলস এই কৃষকযুদ্ধের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তার সহজাত শ্রেণীসংগ্রামের নিরিখে। প্রাচীন কাল থেকে শ্রেণী আন্দোলনগুলো যে ধর্মীয় পারসরে দানা বাঁধতো এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা যে পয়গম্বরী চরিত্র নিয়ে শ্রমজীবি মানুষের পক্ষে লড়াই করতেন আর ১৫’শ শতকের জার্মানদেশের কৃষকযুদ্ধও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তা মূর্ত হয়ে উঠেছে এই বইতে।
ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস (২৮ নভেম্বর, ১৮২০ - ৫ আগস্ট ১৮৯৫) ছিলেন জার্মান সমাজ বিজ্ঞানী, লেখক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক,দার্শনিক, এবং মার্কসের সাথে মার্কসবাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৪৫ সালে তিনি নিজের প্রত্যক্ষন এবং গবেষণার ভিত্তিতে ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা প্রকাশ করেন। ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কসের সাথে যৌথভাবে কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার রচনা করেন, পরে কার্ল মার্কসকে পুঁজি গ্রন্থটি গবেষণা ও রচনার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করেন। মার্কসের মৃত্যুর পরে তিনি সেই বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড-দুটি সম্পাদনা করেন। আরো তিনি মার্কসের "উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব" বিষয়ের নোটগুলো একত্রিত করেন এবং এগুলো পরে "পুঁজি"র চতুর্থ খণ্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়। তিনি পরিবার অর্থনীতি বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।