ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি শিক্ষার সূত্রেই বিকাশ লাভ করে বাঙালির আধুনিক মননচর্চা। তবে শাসকদের উপনিবেশবাদী মানসিকতা বাঙালি মনীষীদের মননভুবনকে বেশি কাল আচ্ছন্ন রাখতে পারেনি। আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে সমৃদ্ধ হয়েও তাঁরা স্বদেশের সমাজ ও জীবনের নানা সংকট বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন আপন শক্তি, সীমাবদ্ধতা ও পরিপ্রেক্ষিতের কথা বিবেচনায় রেখে। এবং উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকেই তাঁদের মনে স্বদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে তাঁরা অবস্থান নেন উপনিবেশবাদী মানসিকতা ও প্রচারণার বিপক্ষে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখের শিক্ষা ও সমাজচিন্তা, ইতিহাস-অন্বেষা ও লোকসাহিত্যচর্চার মধ্যে মূলত ব্যক্ত হয়েছে উপনিবেশবাদবিরোধী স্বদেশানুরাগেরই গভীরতর পরিচয়। শুধু এঁরা নন, এ গ্রন্থে বুদ্ধিবৃত্তির বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়েছে অন্য যেসব মনীষীর—মোহম্মদ বরকতুল্লাহ, আবু জাফর শামসুদ্দীন, রণেশ দাশগুপ্ত, আবদুল হক ও আহমদ শরীফ—তাঁরা সকলেই পরিচালিত হয়েছেন গভীর দেশাত্মবোধসহ একপ্রকার মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। তাঁদের এই মনোভঙ্গিটি উপনিবেশবাদী মানসিকতাকে অগ্রাহ্য করেই বিকশিত হয়েছে। একমাত্র মানব কল্যাণই তাঁদের সকল চিন্তা ও কর্মের লক্ষ্য। সৈয়দ আজিজুল হক এ গ্রন্থে ওইসব লেখকের মনীষাকেই বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাঁদের চিন্তাধারা উদার, স্বচ্ছ, মানবিক, প্রগতিমুখী, সেক্যুলার এবং স্বদেশপ্রীতিতে বিশিষ্ট। যাঁরা সংস্কারমুক্ত আধুনিক চেতনা দ্বারা বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির ধারা এবং এগিয়ে নিয়েছেন সমাজ-প্রগতির সংগ্রাম। ফলে এ গ্রন্থ বাংলাদেশের মননশীল চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অনুধাবনে সহায়ক হবে।
জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল, বর্তমান পিরোজপুর জেলার সেহাঙ্গল গ্রামে। তিনি পাঠ গ্রহণ করেছেন সেহাঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাভ করেছেন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি। শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে, বর্তমানে বাংলা বিভাগে।