১৯৭১ সালে মিলিটারিরা নিশিপুরস্থ বলুপাড়ায় আগুন দেয়। তাতে বাড়ি-ঘরের সাথে বলুদের ঘানিগুলোও পুড়ে যায়। ফলে যুদ্ধের পর অধিকাংশ হতদরিদ্র বন্ধু পৈতৃক পেশা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। তারপর একদা ভয়াবহ বন্যার পর কলুদের জীবনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে দুর্ভিক্ষ। সে দুর্ভিক্ষের অভিযাতে অনেকের মতো খুদাদের প্রাণপ্রিয় সন্তান আবসার প্রাণ হারায়। দুর্ভিঙ্গ-পরবর্তীকালে সুদাদ অনৈতিকভাবে অর্জিত সামান্য পুঁজি আশ্রয় করে তেল ব্যবসায় লিপ্ত হয়। একসময় নিজেকে সে বিত্তশালী করে তুলে। তারপর এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি এলে নিকটস্থ বাজারে জমি কিনে সে তেলকল স্থাপন করে। তেলকলে রাই-সরিষা ভাঙাতে সময় ও খরচ লাগে কম। তেলও বেশি পাওয়া যায়। কৃষকেরা সেখানে ভিড় করে। বুদাদ তেলকলের সংখ্যা বাড়ায়। ফলে নিশিপুরের কলুসমাজের মতো এবার পুরো এলাকার কলুসমাজ কর্মহীন ও শেকড়চ্যুত হয়ে পড়ে। কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত অসংখ্য ঘটনা ও অভিজ্ঞতা অতিক্রম করে বুঁদাদ বিপুল সম্পদের মালিক হয়। কিন্তু সে তার জীবনে প্রত্যাশিত শান্তি কখনো খুঁজে পায়নি। তবে জীবন সায়াহ্নে সে উপলব্ধি করে, তার প্রত্যাশিত জীবন আকাশের নক্ষত্ররাজির মতো অনেক দূরে জ্বলমান। কোনোদিন সে জীবন লাভ করতে পারবে না সে। তাহলে দিগ্ভ্রান্ত নাবিকের মতো হাল ঠেলে এতকাল সে ক্লান্ত হলো কেন? এ উপন্যাসটি ২০০৫ সালে এই সব গল্পের নাম জীবন নামে ছোটো-কলেবরে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর এ দেশের এক ফিল্ম পরিচালক লেখকের অনুমতি না নিয়ে এই উপন্যাসের কাহিনি প্রভাবান্বিত ফিল্ম নির্মাণ করে বসেন। আবার এই কাহিনির অবিকল অনুরণনে উপন্যাস লেখার চেষ্টাও হয়েছে।