জননায়ক শব্দটির মধ্যে নেতা এবং নায়ক সমার্থক হয়ে রয়েছে। নেতা অর্থ পরিচালক বা পথপ্রদর্শক অথবা নায়ক। নায়ক বলতে আবার প্রবর্তক নির্বাহক বা প্রভু বুঝায়। নায়ক সত্তায় জনগণের মধ্যে একমাত্র এবং শ্রেষ্ঠত্বের কথায় বিবৃত হয়। এখানে জননায়ক বাঙালি বলতে বাঙালির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা বাঙালির পথ প্রদর্শক হিসেবে বঙ্গবন্ধু এবং নজরুলকে বুঝানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির নেতা (নায়ক) আর নজরুল সাহিত্যের নেতা (নায়ক)। নজরুল ছিলেন সাহিত্যের সৃজনশীল প্রতিভা আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির সৃজনশীল প্রতিভা। দু’জনেরই থিং ট্যাংক গ্রাম, সাধারণ মানুষ এবং মানুষের বাঁচার অধিকার অর্থাৎ স্বাধীনতা। নজরুল ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমে ভারতবাসীর মুক্তি প্রত্যাশা করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে জেলেও ঢুকিয়ে ছিলেন। তিনি জেলে বসে অনশনও করেছিলেন। প্রতিবাদের সাহিত্য নজরুলে যা শুরু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে তাই সংগ্রাম—মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণই হচ্ছে সেই— ‘World political poetic’। এই কবিতা নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার থেকেও জ¦ালাময়ী। ‘একটি কবিতা পড়া হবে’ ‘কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি’ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ (নির্মলেন্দু গুণ)। দেশপ্রেমিক নেতা, নায়কের মৃত্যু হয় না, দু’জনের মৃত্যুতেই ট্র্যাজেডি ছিলো। তবে তাঁদের জীবন নশ^র হলেও আদর্শ অবিনশ^র। ঐক্যের অখণ্ডতায় নজরুল আজও বিদ্রোহী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহমানতার শক্তিতে আজও চিরঞ্জীব। একজন জাতীয় কবি অপরজন জাতির পিতা। এঁরাই বাঙালি জাতির আইকন—পুরোধা বাঙালি।