সদরঘাটের সাম্পান ঘাটা থেকে একটা নৌকা ভাড়া করল রায়হান। এক ঘণ্টার জন্য, ভাড়া দুইশত টাকা। এখনকার বেশির ভাগ নৌকাই ইঞ্জিন চালিত। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ রায়হানের ভালো লাগে না। তাই দেখেশুনে ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা ভাড়া করল। তারপর ভেসে বেড়াতে লাগল কর্ণফুলী নদীতে। আহ্! কী শান্ত চারিদিক। রায়হানের খুব শখ, তার বড় একটা নৌকা থাকবে। রবীন্দ্রনাথের বজরার মতো। যখন খুশি নৌকায় এসে থাকবে, ভেসে বেড়াবে। পড়বে, লিখবে। নৌকার মাঝি একটা বিড়ি ধরাল। খুবই হালকা পাতলা তার শরীরের গঠন। গায়ের রং রোদে পুড়ে তামাটে। দেখে মনে হয় বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। রায়হান জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কবে থেকে নৌকা চালান?’ ‘ম্যালা দিন। নদীর ধারে বাড়ি। সেই ছোটবেলা থাইকা নৌকা বাওয়ার অভ্যাস। একাত্তুরের যুদ্ধের সময়ও আমি এই কর্ণফুলীতে নৌকা বাইছি।’ কথাবার্তার এক পর্যায়ে রায়হান জিজ্ঞেস করল ‘তারপরও কেন চালান?’ ‘নেশা। নদীর নেশা। এইটা যারে পাইছে, সে নদী ছাড়া থাকতে পারে না। একদিন না আসতে পারলে মনডা ছটফট করে। নদীতে আসলে মনডা শান্ত হয়। এই নদীর নেশা যারে পাইছে, মরণের আগ পর্যন্ত এ নেশা ছুটব না। আমার ইচ্ছা নৌকা বাইতে বাইতে অথবা নৌকার উপর, নদীর মাঝখানে যেন আমার মরণ হয়।’