এই উপমহাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট ও ইসলাম-- এই প্রধান চারটি ধর্মের মধ্যে শেষের দুটি ধর্ম এই জনপদে বহিরাগত। এই দুটি ধর্মই সেমেটিক এবং প্রথমোক্ত দুটি ধর্ম এই জনপদেই উৎপত্তি। ফলে খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্মদুটিকে স্থানীয় ও বহিরাগত দ্বন্ধ ছাড়াও দর্শন ও আদর্শের অভিমুখে প্রবল বৈপরীত্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চারটি ধর্মের চতুর্মুখী স্বরূপের মধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ট ধর্মের মধ্যে যত না দ্বন্ধ-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে তারচেয়ে বেশি সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে হিন্দু বনাম বহিরাগত ইসলামের সাথে। তবে এই দ্ব›দ্ব ততটা তীব্র হয়নি বহিরাগত খ্রিষ্টধর্মের সাথে। এর প্রধান কারণ হিসেবে ইসলামের একত্বাবাদের দর্শনের সঙ্গে হিন্দু পৌত্তলিক দর্শনের বৈপরীত্যই অন্যতম অন্তরায়। এই অন্তরায় থেকে উত্তরণের জন্য খ্রিষ্টধর্ম সেবামুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করে দরিদ্র হিন্দুসম্প্রদায়কে যতটা ধর্মান্তরিত করতে পেরেছে, ইসলামধর্ম ন্যায়বিচার ও সুশাসন দিয়েও ততটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। তবে, ইতিহাস না জানলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বিকৃত ইতিহাস জানা সমাজ ও জাতির পক্ষে ক্ষতিকর। আর এই ক্ষতির বড় দৃষ্টান্ত হল ইসলাম প্রচারের ইতিহাস সম্পর্কিত বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তিতে সৃষ্টি হয়েছে নানা মুনির নানা মত। তাই কারো মতে তলোয়ারের জোরে, কারো মতে মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সুফিদের ভূমিকাই সর্বাধিক। কোন্টি সত্য? এই ইতিহাস এখনো ভ্রান্তির বেড়াজালে নিমজ্জিত কিংবা কিংবদন্তির লাল কুয়াশা চাদরে আচ্ছন্ন। এই আচ্ছন্নতা অপসারণ করার উদ্যোগ এযাবৎ সংশ্লিষ্ট গবেষক ও অধ্যাপকদের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রাপ্তির প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান গবেষণা এই সীমাবদ্ধতার বাইরের আরো কিছু মৌলিক উৎসের অনুসন্ধান সাপেক্ষ স্বাধীন চিন্তার সুশৃঙ্খল বিন্যাস। সেইসাথে আছে স্বেচ্ছায় ইসলামে দীক্ষিত হওয়া; বিশিষ্ট নওমুসলিমদের প্রতিক্রিয়া।