গল্পকার হিসেবে পরিচিতির বৃত্তে অবস্থান করেও সালেহা সুলতানা নিমগ্ন হোন সাহিত্যের বহুমুখী শাখায়। তারই স্বাক্ষরবাহী স্বীকারোক্তি এ গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহ। সময়ের পরিক্রমায় যে সকল সাহিত্যকর্ম লেখকের স্বকীয় নৈপুণ্যে প্রাণময় হয়ে বেঁচে আছে, সে সকল কালজয়ী সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ গ্রন্থে। প্রাচীন যুগের প্রথম নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ আবিষ্কার পূর্বকথন বৃত্তান্ত যেমন আলোচিত হয়েছে পাশাপাশি মধ্যযুগের কবিদের পরিচিতি বর্ণনা করা হয়েছে। কালিদাস ও রবীন্দ্র পরবর্তী সাহিত্যিকদের সৃজনকর্মের পাঠ উন্মোচন করে লেখক যেন নবায়ন করেছেন সময়ের অতলে পড়ে থাকা মূল্যবান হিরকমালাকে। চর্যার কবি কাহ্নপা, লুইপা, ভুসুকুপা যে ভাষায় নির্মাণ করেছেন কবিতা, সে ভাষারই উত্তরসুরি লেখকদের রচিত চিরায়ত সাহিত্যের শিল্প সার্থকতা নিয়ে সালেহা সুলতানার আলোচনা সরল, বাঙ্ময় ও ঋজু। শৈল্পিক মননে ঋদ্ধ আলোচক প্রাচীনতায় সমর্পিত নির্বিত্ত মানুষের সমাজচিত্র উত্থাপন করেন পদকর্তার রচিত পদে। মধ্যযুগের প্রণয় কাহিনীর নির্মল সারল্যময় উপস্থাপন অজানার গণ্ডিকে পেরিয়ে সত্যকে জানার বার্তা তাঁর অনুসন্ধানী লেখায় উঠে এসেছে। নবম-দশক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের সাহিত্যকদের রচনা ক্রম অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আলোচক সালেহা সুলতানা প্রতিটি রচনার বিষয়ভিত্তিক আলোচনা এবং এর প্রকরণ শৈলীকে ব্যবচ্ছেদ করার প্রয়াস পেয়েছেন। ফলত, তাঁর বিশ্লেষণে শিল্পের যথাযথ মূল্যায়নের স্বীকরণ ঘটেছে। এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ প্রবন্ধগুলো পঠিত ও প্রচারিত হয়েছে বাংলাদেশ বেতারের ‘সাহিত্য প্রসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে।