আমাদের দেশের স্বাধীনতা উত্তরকালের গোড়ার দিকের ইতিহাস বড় ট্রাজেডিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে স্বাধীনতার স্ব-পক্ষজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। তারা পদে পদে প্রতিনিয়ত সমাজের দাম্ভিক মানুষদের দ্বারা শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। প্রায় সর্বপর্যায়ের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ভুলে তাদের মানবিক নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বসে। সমাজে হত্যা-গুম বেড়ে যায়। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্য ধীরে ধীরে গোটা দেশটা মগেরমুলুকে পরিণত হয়। রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। গ্রাম-গঞ্জে বিনা কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে হিন্দু শ্রেণি ও দুর্বল মুসলমানরা তাদের বাসস্থান, জমি-জায়গা নামমাত্র দামে বিক্রি করে দেশত্যাগ বা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। নারীর প্রতি পুঁজিপতিদের আগ্রাসন। এসব ক্রাইসিস থেকে আলো আঁধারি উপন্যাসটিতে দেশের সেরূপ প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে লেখক সনাক্ত করেছেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা উমেদ আলীকে, তার পরিবারপরিজনকে, হীরণ দাস ও তার পরিবারপরিজনকে। তাদের সহায়সম্বল হারানোসহ নানান দুঃখ-কষ্টের ঘটনাবলীর অনুপঙ্খু উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। উঠে এসেছে, অপ্রকাশিত বীরাঙ্গনা গৃহবধুর পাগল হয়ে যাওয়ার গল্প। তার যুদ্ধশিশুর বড় হওয়া ও বিয়ে। রয়েছে প্রবল পরাক্রমে জয়-জহির-রীনার গভীর রোমান্টিকতা। সেই কঠিন সময়ে নীতি-আদর্শ ধরে রাখতে মুক্তিযোদ্ধা আসিব কামালের নিরন্তর সংগ্রাম। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের বেকারত্বের অভিশাপ। যুদ্ধশিশু রত্নার স্বামীর ঘরে ঘুরে দাঁড়াবার কাহিনি। উপন্যাসটি শেষ করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভীতির মধ্য দিয়ে। তাদের কি একদিন সত্যি সত্যি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে? কিংবা ফাঁসির দড়িতে কি ঝুলতেই হবে? এরূপ দ্বিধা-সংশয়ও উপন্যাসটিতে নিশ্চিত করা হয়েছে অনেকভাবে। আলো আঁধারি উপন্যাসটি প্রথম রের হয় ২০১২ খ্রি. সনে। উল্লেখ্য লেখক পূর্বের প্রকাশিত এই গ্রন্থটির একটি কপি আমার হাতে দিয়ে বললেন, সে সময়ে স্থানীয় এক প্রকাশন থেকে অনেক ভুলভ্রান্তির সমন্বয়ে বের হয়েছিল। তারপরও পাঠকমহলে অনেক সাড়া মেলে। এবং প্রকাশিত কপির প্রায়টাই শেষ হয়ে যায়। কাজেই পাঠকের কথা ভেবে ও সময়ের সাক্ষীসরূপ বইটি পুনঃপ্রকাশ করা প্রয়োজন।’ পরবর্তীতে কপিটি পড়ে লেখকের সাথে একমত হই এবং চমৎকার এই বইটি পুনঃপ্রকাশ করার সিদ্ধন্ত নিই। সুখপাঠ্য উপন্যাসটি সব পাঠকের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রকাশক
ইদরিস আলী মধু পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার পনিসাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ও গ্রাম্য সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে বড়ো হয়ে ওঠেন। সে কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক মনা। লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করাও সে-কারণেই। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখি শুরু হলেও পত্র-পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ পায় নব্বই দশক থেকে। 'নিমগ্ন নীলিমা' তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প, উপন্যাস, ছড়া ও গ্রন্থ আলোচনা লিখে থাকেন। তিনি পেশায় অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মকর্তা। প্রকাশিত গ্রন্থ: আলো-আঁধারি (উপন্যাস-২০১২), ফুলপরি পাখী ও খুকুমণি (ছড়াগ্রন্থ-২০১৪)। লেখালেখির জন্য ২০১১ সালে (ফোক গল্পের জন্য) দৈনিক কালের কণ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়েও অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন। 'নিমগ্ন নীলিমা' কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তিনি শখের অনুগত হয়ে কবিতা লিখলেও এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতাগুলো বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং ছোট কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত কবিতাগুলো পাঠ করে বান্ধু-বান্ধব, প্রিয় পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার প্রেরণা জোগান। তাদের অনুপ্রেরণাতেই কবির এ ক্ষুদ্রপ্রয়াস। কবিতাগুলি প্রেম-প্রণয়-বিরহ বিষয়ক রসবোধের কবিতা। কবিতাগুলিতে জড়িয়ে আছে স্মৃতি-বিস্মৃতির অমোঘ ঘোর। আনন্দ-বেদনায় জড়িয়ে আছে এদেশের নারী-নদী-প্রকৃতি ও প্রেম।