আলোচ্য গ্রন্থে ১৯৭২-৭৫ সময়কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের কর্মকাণ্ড আলোচনা করা হয়েছে । বঙ্গবন্ধুর জীবনীকে আমরা দুটি পর্বে ভাগ করতে পারি । ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্ব । এসময়ে তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন , জেল খেটেছেন , সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটেছে । ২৫ শে মার্চ ( ১৯৭১ ) স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যাবহিত পরেই পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে আটক করে পাকিস্তানে অন্তরীণ করে রাখে ও সাজানো বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করে । অনুপস্থিত থেকেই তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । তাঁর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ তাঁরই নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ই ডিসেম্বর ( ১৯৭১ ) বিজয় অর্জন করে । এরপর ৮ ই জানুয়ারি তিনি মুক্ত হয়ে ১০ ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং শাসনভার গ্রহণ করেন । এটি তাঁর জীবনের দ্বিতীয় পর্ব । প্রথম পর্বে তিনি যেমন বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ , একটি মানচিত্র ও একটি জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছেন , তেমনি দ্বিতীয় পর্বে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন । বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতোদিনে শত শত গ্রন্থ রচিত হয়েছে , তার প্রায় সবগুলোই বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রথম পর্ব নিয়ে । কিন্তু তার জীবনের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়েছে । যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে তাঁর যে অবদান তা নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়েছে , গবেষণা তো দূরের কথা । ফলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কুচক্রীমহল বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন , ভারত - বাং লাদেশ মৈত্রী চুক্তি , ১৯৭৪ -এর দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নানা ধরনের অসত্য ও বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে থাকে । এসব অভিযোগের ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করতে এবং দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্বকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের প্রয়োজন । বঙ্গবন্ধুর জীবনের দ্বিতীয় পর্বের ( ১৯৭২-৭৫ ) ইতিহাস রচনা ও আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ । প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
ড. মাে. মাহবুবর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, আধুনিক বাংলা ও বাংলাদেশ, স্থানীয় ইতিহাস এবং আরকাইভস। তিনি এখন পর্যন্ত ১৩টি গ্রন্থ ও প্রায় ৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে: একাত্তরে গাইবান্ধা, বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯০৫-৪৭, ১৯৪৭-৭১, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস ১৭৭৩ থেকে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (যৌথভাবে), গণহত্যাবধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ: রাজশাহী জেলা, বাংলাদেশ আরকাইভস ইত্যাদি। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে একটি আরকাইভস প্রতিষ্ঠা করেছেন। উক্ত আরকাইভসে সংগ্রহ করা হয়। লিফলেট, পােস্টার, স্মরণিকা- বার্ষিকী, জেলাউপজেলার ইতিহাস, জীবনী- আত্মজীবনী, সাময়িকী-লিটল ম্যাগাজিন, গবেষণা জার্ণাল, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সমাজ-সংস্কৃতি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ, এম. ফিল ও পি. এইচ. ডি. থিসিস, ইত্যাদি। আরকাইভসে এপর্যন্ত ৪৭ জন তাঁদের সংগ্রহ দান করেছেন।