বই তো শুধু দুই মলাটে আবদ্ধ কিছু কাগজের পাতার সমষ্টি নয়। এটি একটি জাতির বা সভ্যতার মনন ও জ্ঞানের আকর। বই মানুষকে নিজেকে চিনতে শেখায়; তার চারপাশের জগৎ সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে শেখায়। আর প্রশ্ন করার গুণই তো মানুষকে অন্য প্রাণি থেকে আলাদা করেছে, শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে। কিন্তু অন্যায়ভাবে সমাজের ক্ষমতা-কাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী শাসকগোষ্ঠী মানুষের প্রশ্ন করার এই চিরন্তন গুণকে ভয় পায়; বইকে ভয় পায়। নানা কৌশলে বইপড়া নিরুৎসাহিত করে; ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রকৃত বয়ান বদলে দিয়ে নিজেদের অনুকূল প্রপঞ্চ ও বয়ান নির্মাণ করে এবং তা মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়। উদ্দেশ্য একটাই - প্রতাপ বা হেজেমনির পথপরিক্রমাকে নির্বিঘœ করা। কিন্তু মানুষ জন্মগতভাবে সত্যান্বেষী। সে তার ঔৎসুক্য-নিঃসৃত প্রশ্নের সিঁড়ি বেয়েই সত্যের চ‚ড়ায় আরোহণ করে; নন্দনকে আলিঙ্গন করে। সীমার শিকল ছিন্ন করে মুক্তির পথে হাঁটে। সে জানে, এই সত্য-জ্ঞানই তাকে মুক্তির পথ দেখাবে। কিন্তু তার এই আরোহণ-পথ নিষ্কন্টক নয়। নানান বাধা ও প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে; প্রাণসংহারী নানান অপশক্তির ভ্রূকুটি অস্বীকার করে একাগ্রতা নিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হয়। তাকে তো এগোতে হবেই। সে না এগোলে তো সভ্যতার চাকা ঘুরবে না। তার পথচলা চিরন্তন। তার পথ ধরেই তো সভ্যতা এগোয়। এমনই বিষয়বস্তুকে জাদু বাস্তবতার আবহে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন বেন ওকরি তাঁর মুক্তিসন্ধানী শিল্পী উপন্যাসে।