অনেকে বলে আসছেন 'উন্নয়নশীল', অনেকে 'অবক্ষয়ক্লিষ্ট'। দুটি শব্দ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি অর্থ দেয়। আসলে কোন শব্দটি বিশেষণ হিসেবে আমাদের জাতির বেলায় প্রযোজ্য? 'অবক্ষয়ক্লিষ্ট জাতি' এবং 'পশ্চাৎবর্তী জাতি' কথা দুটোও একার্থক নয়। পশ্চাৎবর্তী জাতি সুস্থ ও উন্নতিশীল হতে পারে; কিন্তু অবক্ষয়ক্লিষ্ট জাতি রুগ্ন ও বিকারপ্রাপ্ত। অবক্ষয়ক্লিষ্ট জাতি অবক্ষয়ের ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারলেই কেবল উন্নতির উপায় করতে পারে। ক্ষয় আর অবক্ষয়ও এক নয়। 'স্বর্ণযুগ' আর 'অন্ধকার যুগ' কথা দুটোও এ প্রসঙ্গে বিবেচনায় আসে। বাংলাদেশে এখন আমরা কি স্বর্ণযুগে আছি, না অন্ধকার যুগে? যে সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা চলছি তার প্রকৃতিটা কেমন? রাজনীতিক্ষেত্রে ক্ষমতার বাইরে থেকে কিংবা ক্ষমতাসীন হয়ে জাতীয় ও সামাজিক উন্নতির কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে গিয়ে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কেউ কি কোনোদিন গভীরভাবে ভেবেছেন এ প্রশ্ন? মীমাংসা খুঁজেছেন? কোন গন্তব্যের দিকে তাঁরা পরিচালনা করেছেন আমাদের? দেশের কোনো কোনো ভাবুক ও কর্মী নানাভাবে জাতির ও সমাজের অবস্থা বিশ্লেষণ করছেন। কিন্তু সেসব বিশেষ মূল্য পায়নি। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বুদ্ধিজীবীরা চলেছেন চলমান রাজনীতির গতানুগতিক ধারা ধরে।
Abul Kashem Fozlul Haque আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।