ডা. এম এ আজিজ সরকার ওরফে নয়া মিয়া- কোলকাতায় ছাত্রাবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের পর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই রাজনৈতিক চেতনা থেকেই মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। সৈয়দপুরে তিনিই প্রথম তার ডিসপেনসারি ও বাড়ির ছাদে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন এবং এলাকার অন্যান্য সহযোদ্ধাদের মধ্যে এই পতাকা বিতরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের পর যখন স্থানীয় বাঙালিরা নিরাপদ স্থানে চলে যেতে থাকে, তখন তিনি তাদেরকে বাধা দিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করার কাজে নেমে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর নিজ ঘরের সামনে দুর্গ খুড়েন এবং বলেন, আমি স্বাধীনতার জন্য স্বপরিবারে শহিদ হবো এখানে, তবুও কাপুরুষের মতো নিজের ভিটা ছেড়ে পালাবো না। ইতিহাসে আমাদের নাম লেখা থাকবে। ২৭ মার্চ, ১৯৭১ নয়া মিয়ার পরিবারের ওপর নেমে আসে শত্রুপক্ষের পৈশাচিক আঘাত। সেই আঘাতের শিকার নয়া মিয়া হারিয়ে যানÑ অজানায়। লাশ পাওয়া যায়নি। স্ত্রী হামিদা বেগম পৈশাচিকতার শিকার হয়ে ত্যাগ করেন ধরাধামের মায়া। দৈবক্রমে গোটা পরিবার বেঁচে যায় হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং মৃত বলে কথিত গ্রামের এক স্বজনের অলৌকিকভাবে ৭৪ সালে দেশে ফিরে আসায় আশাবাদী মা আছিয়া বেগম নয়া মিয়ার অপেক্ষায় কাটিয়েছেন দশটি বছর। তারপর বুঝেছেন যে, তার ছেলে আর ফিরে আসবে না। আশা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন! এ নিয়েই দুর্ভাগা মা ও ছেলের এই গল্প, যার সাথে রয়েছে চার হাজারেরও অধিক নাম না জানা লাশের অলৌকিক ছায়া।