প্রকাশের ধারাবাহিকতায় ‘অপর বেলায়’ কবি, কথাসাহিত্যক রাম চন্দ্র দাসের দশম বই। গল্পগ্রন্থ হিসেবে দ্বিতীয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আমি ছুঁয়েছি স্বাধীনতাকে’ প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। এরপর একে একে আরও চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে- ‘শ্যামল সন্ধ্যার কাব্য’, ‘যদি এই বাংলায় আসো’, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’, ‘নদীর কাছে শেখা জীবনের পাঠ’ এবং ‘কেবলই অতীত হয়ে যায়’। ‘বিবাহ বিসংবাদ’ রাম চন্দ্র দাসের প্রথম গল্পগ্রন্থ। শিশু-কিশোরদের উপযোগী বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ ‘এসো বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিখি’ ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। তাঁর সবগুলো কাব্যগ্রন্থ থেকে শ্রেয় কবিতা চয়ন করে ‘নির্বাচিত কবিতা : বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ’ নামে একটি সমৃদ্ধ কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। পেশায় সরকারি চাকুরে কবি রাম চন্দ্র দাস কাজের সুবাদে ঘুরে বেরিয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নানা জায়গা, দেখেছেন বাংলার রূপবৈচিত্র্য, জীবন ও জীবিকার জন্য মানুষের সংগ্রাম, মানবীয় সীমাবদ্ধতা, সামাজিক মানুষের বোধ ও বাস্তবতার অসংগতি। ফলে অনিবার্যভাবেই জীবনবোধের উৎস থেকে উঠে আসা এসকল অনুভবের নির্যাস তাঁর কবিতার উপজীব্য। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর কবিতায় স্বদেশপ্রেম প্রবলভাবে অনুভূত হয়। মানুষের দুর্দশা তাঁকে ব্যথিত করে প্রবলভাবে। সে কারণেই সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি তাঁকে আন্দোলিত করে, যে-কোনো অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার। কবি রাম চন্দ্র দাসের এ পর্যন্ত প্রকাশিত সবগুলো গ্রন্থই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কাব্যচর্চার পাশাপাশি তিনি একজন প্রসিদ্ধ সংগীতজ্ঞ; বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিবন্ধিত কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকার। তাই তাঁর কবিতাকে ছুঁয়ে আছে সংগীতের মাধুর্য। তাঁর কবিতায় রয়েছে তাল, লয়ের সুনিপুণ সংযোজন। ফলে তাঁর কবিতা যে-কোনো পাঠকের কাছে হয়ে ওঠে ছন্দময়, সাবলীল ও সুখপাঠ্য। এ কারণে অনেক প্রখ্যাত আবৃত্তিকার তাঁর কবিতাকে আবৃত্তির জন্য বেছে নিয়েছেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২-এ প্রকাশিত ‘অপর বেলায়’ গল্প গ্রন্থটিও পাঠকদের কাছে সুপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
জন্ম : ১৫ মার্চ, ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ। মা সন্ধ্যা রানী দাস, বাবা নারায়ণ চন্দ্র দাস। জন্মস্থান : খাগজানা, উপজেলা : কালুখালি, জেলা : রাজবাড়ী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা গ্রামের খাগজানা স্কুলে। অতঃপর পাংশা জর্জ হাই স্কুল ও পাংশা কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ¯œাতকসহ মাস্টার্স এবং ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হবার, তা হয়নি। নবম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন পদে চাকরির এক পর্যায়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে তিন বছরেরও অধিককাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হন। এরপর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি রাম চন্দ্র দাস একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়েই। ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা ও গান প্রকাশিত হয়েছে। নিজের লেখা অসংখ্য গানে নিজেই সুর করে সকণ্ঠে গেয়েছেন শিল্পী রাম চন্দ্র দাস। তাঁর লেখা গান, ‘রাম সঙ্গীত’ নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত গীতিকার ও সংগীতশিল্পী। ইতোপূর্বে ‘আমি ছুঁয়েছি স্বাধীনতাকে’, ‘শ্যামল সন্ধ্যার কাব্য’, ‘যদি এই বাংলায় আসো’, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এবং ‘নদীর কাছে শেখা জীবনের পাঠ’ নামে তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘বিবাহ বিসংবাদ’ রাম চন্দ্র দাসের প্রথম গল্পগ্রন্থ।