শ্যামসুন্দর সিকদার পেশায় সরকারি চাকুরে হলেও লেখালেখির সাথে জড়িত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। তিনি মূলত কবি। তবে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী লেখায়ও সমান পারঙ্গম। বৈষয়িক বিবেচনায় শ্যামসুন্দর সিকদার অল্পে তুষ্ট মানুষ। কিন্তু সাহিত্যচর্চায় তাঁর নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা নিরলস এবং অবিরাম। কলম তাঁর সত্য প্রকাশে নির্ভীক, অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বলিষ্ঠ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ এবং শুদ্ধ দেশপ্রেম প্রকাশে তিনি আপসহীন। অন্তর্লোকের তাড়নায়, নিজের আনন্দের জন্য সাহিত্যচর্চায় নিবিষ্ট হলেও প্রাগ্রসর নাগরিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ তাঁর প্রবন্ধে স্পষ্ট। ফলে লেখনীতে নান্দনিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখেও তিনি তাঁর পাঠককে নৈতিকতার সহজ-সরল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস পান। প্রতিটি প্রবন্ধ পাঠ শেষে পাঠক যেন একটু একটু করে মানুষ হিসেবে একটি শ্রেয়তর অবস্থানে পৌঁছাতে পারে, সেই প্রচেষ্টা তাঁর লেখায় দৃশ্যমান। তাঁর প্রবন্ধের বিষয়বস্তু বিচিত্র। মানসপটে, চিন্তাচেতনায় বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে স্বদেশপ্রেম ও দেশমাতৃকার উন্নয়ন ভাবনা। পেশাগত কাজের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কর্মী এবং পরবর্তীতে সচিব ও সিনিয়র সচিব হিসেবে নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় দেশের উন্নয়ন কর্মকাÐের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থেকেছেন শ্যামসুন্দর সিকদার। বোধ করি সে কারণেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সকল অর্জনের পথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন কীভাবে শক্তিশালী নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এর একটি যৌক্তিক বিশ্লেষণ তাঁর প্রবন্ধে প্রবলভাবে উপস্থিত। তাই ‘বিচিত্রতা’ শ্যামসুন্দর সিকদারের বিচিত্র প্রবন্ধের সংকলন হলেও বঙ্গবন্ধু, তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার এবং নৈতিকতা বিষয়ক প্রবন্ধই মুখ্য। শ্যামসুন্দর সিকদারের গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘নির্মাণে রেখেছি যুদ্ধের হাত’ মাতৃভাষা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। সে হিসেবে বিচিত্রতা দ্বিতীয় প্রকাশনা। এই গ্রন্থে যে প্রবন্ধগুলো স্থান পেয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই ইতঃপূর্বে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তাঁর লেখা পাঠক সবসময়ই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে থাকে। আমি বিশ্বাস করি, ‘বিচিত্রতা’ গ্রন্থটিও পূর্বের ন্যায় পাঠকপ্রিয়তা পাবে।
জন্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম-গিরেন্দ্র মোহন সিকদার, মাতার নাম-কৃষ্ণদাসী সিকদার ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মাটি-জল, খাল-নদী এবং শস্য-শ্যামল প্রকৃতি দেখে দেখে গ্রামীণ পরিবেশে তার কৈশোর কেটেছে। শিক্ষাজীবন : নিজগ্রাম দক্ষিণ লোনসিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রথমপাঠ শুরু। অতঃপর নড়িয়া বিহারী লাল হাই স্কুল, ফেনী মডেল হাই স্কুল এবং ফেনী কলেজে অধ্যয়ন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে ১৯৮১ শিক্ষাবর্ষে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৮ সালে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমবিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। কর্মজীবন : ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৬ সালে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনসহ বিসিকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে এবং ২০১৭ সাল থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে যথাক্রমে সচিব ও সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। সাহিত্যকর্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন প্রথিতযশা কবি ও সাহিত্যিক। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫০। তন্মধ্যে কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, ছড়া, শিক্ষামূলক গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ। সাহিত্য ও গবেষণা কর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।