"বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির এক অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বাঙালি জাতির অধিকার এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। উনিশশাে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলন, ছিষট্টির ৬-দফা, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযােগ ও স্বাধীনতা আন্দোলনসহ এদেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তিনি বজ্রকণ্ঠে বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতাসহ সকল পেশার নারী-পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বহু কাক্ষিত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা অর্জনই বঙ্গবন্ধু তথা বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা ও জাতিসত্তার প্রতীক। বাঙালি জাতি তথা আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর মতাে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতীয়তাবাদী ত্যাগী নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমরা পেয়েছিলাম, যা কোনাে জাতির ভাগ্যে যুগে যুগে কেন শতাব্দীতেও আসে না। বঙ্গবন্ধুর মতাে আদর্শ নেতৃত্ব পেয়ে যে কোনাে জাতি গর্ব করতে পারে এবং বদলে দিতে পারে তার ভাগ্য। কিন্তু বাঙালি জাতির চরম দুর্ভাগ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত নব্য স্বাধীন একটি দেশে শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন সকল জাতীয় শক্তিকে একত্রিত করে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন তখনই আমাদের অসতর্কতা ও অনৈক্যের সুযােগে '৭১-এর পরাজিত স্বাধীনতা-বিরােধী ও দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি '৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালােরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তারা ভেবেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হবে। কিন্তু না, চাঁদ-সুরুজের মতাে তিনি আরও বেশি আলােকিত হন এবং ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ রূপে আবির্ভূত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। গণপরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান আইন পরিষদ অধিবেশনে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় আইন পরিষদের অধিবেশনে উপস্থাপিত বক্তব্য শুধুমাত্র ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মুদ্রিত হতাে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে যে বক্তব্য-বিবৃতি দেন তা নিয়েই সঙ্কলন করা হলাে ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি’ গ্রন্থটি।