প্রথম সৌখিন সংস্করণের ভূমিকা কৃষণ চন্দরের এই গাধা-উপাখ্যান-এর বাংলা রূপান্তরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৫ সালে (পাক-ভারত যুদ্ধের সময়)। পরে দৈনিক আজাদে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। আমিও তখন জানতাম না এটি ছিল এই সিরিজের দ্বিতীয় বই (আমি গাধা বলছি)। তারপর যখন গাধার আত্মকথা অনুবাদ করি এবং পুস্তকাকারে ছাপা হয় তখন প্রথমে আমি তা দীর্ঘপথ পরিক্রমার পর দুটো বই একীভূত করে গাধা-উপাখ্যান নাম দিয়ে বের করার উদ্দেশ্য হল যারা এর একটা পড়েছেন অপরটি পড়েননি তাদের জন্যে বাড়তি সুবিধাপ্রাপ্তি এবং এই ক্লাসিক সাহিত্যটি রুচিশীল পাঠকরা যাতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ও পঠনের জন্যে সংগ্রহ করতে পারেন তার পথ সুগম করা। বলে নেওয়া ভালো ইতিপূর্বে এ দুটো বইই মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা এই বইটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করছি যখন ভারতীয় বই বাজারে সয়লাব সৃষ্টি করেছে এবং আমাদের অনেক প্রকাশক দিশেহারা হয়ে পাততাড়ি গুটাতে শুরু করেছেন। সম্পদের এবং সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই আয়োজন মহাকালের বুকে ভালো বইএর একটি স্বাক্ষর রেখে যাওয়া। বিশ্বের প্রায় ৪০টি ভাষায় যে বইটির অনুবাদ হয়েছে বাংলাভাষায়ও এর একটি সংকলন পাঠকদের উপহার দিতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত। ভালো বই প্রাপ্তির অভাবে আমার অনুবাদকর্ম দীর্ঘদিন স্থগিত। আমার কাছে এর কোনও কৈফিয়ত নেই। সহৃদয় পাঠকরা আমার ব্যাপারে ইতিমধ্যে হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রায় এক যুগ পর আমি এই নতুন সংস্করণটি তাদের হাতে তুলে দিতে পেরে খানিকটা স্বস্তি ও দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতীকধর্মী এই দুটো উপন্যাসের প্রেক্ষাপট এক হলেও এর রচনাশৈলী ও কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য এমনই যে, দুটোই স্বয়ংসম্পূর্ণ, পাঠককে একটি পড়ে অপরটির আশায় বসে না থাকলেও চলবে। আবার দুটো একত্রে পড়লে একটি আরেকটির পরিপূরক মনে হবে। আমি গাধা বলছির বিষয়বস্তু ঢাকা ড্রামা প্রায় বছর দর্শনীর মহিলা সমিতিতে মঞ্চস্থ করে। টেলিভিশনেও দু-বার নাটক প্রদর্শিত মহান কৃষণ ছিল। তাঁকে দেখার এবং পাবার একটা গোপন ইচ্ছা পোষণ করতাম। প্রকাশের সময় তাঁকে ঢাকায় সংর্ধনা প্রদানের জন্যে বাংলা একাডেমির যোগাযোগ করি। বাংলা একাডেমি সানন্দে প্রস্তাবে রাজি হয়। দুর্ভাগ্য, আমার ইচ্ছা তাঁকে জানিয়ে পর ফেরত-ডাকে তার মৃত্যুসংবাদ শেষ জীবনে প্রখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমার (হোমিওপ্যাথ) তাঁর চিকিৎসা করছিলেন। একটা আছে, শেষ জীবনে ওয়াকার আহমেদ নামে গ্রহণ এক মুসলমান মেয়ের গ্রহণ করেন। কৃষণ সম্পর্কে জানতে হলে খাজা আহমদ আব্বাসের নিবন্ধটি উপন্যাসের প্রারম্ভে পড়ুন। মোস্তফা হারুন
উর্দু সাহিত্যের অমর কথা শিল্পী কৃষণ চন্দর। উর্দু গল্পকে এক নতুন দিক দেখাতে কৃষণ চন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অবদান কৃষণ চন্দর। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় প্রগতিশীল লেখক সংঘের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, কৃষণ চন্দর তাতে অংশ নেন। তাঁকে সেই সম্মেলনে প্রগতিশীল লেখক সংঘ পাঞ্জাব শাখার সম্পাদক মনােনীত করা হয়। শিক্ষকতা করার সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ সময় তিনি ভগত সিং এর দলে যােগ দেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দু’মাস জেল খাটেন। কৃষণ চন্দর তার ৬৩ বছরের জীবনের ৪০ বছর উর্দু সাহিত্যের উন্নয়নে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি অবিচ্ছিন্নভাবে লিখেছেন গল্প, উপন্যাস নাটক, চিত্ৰকাহিনী, চিত্রনাট্য ও শিশু সাহিত্য। লিখেছেন পাঁচ হাজারের অধিক উর্দু ছােট গল্প । এ ছাড়া লিখেছেন ৮টি উপন্যাস। বিভিন্ন বিষয়ে ত্রিশটি গ্রন্থ এবং তিনটি রিপাের্টাজ। কৃষণ চন্দর ছিলেন খুবই উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। তিনি ধর্মীয় রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্ত সংকীর্ণ দৃষ্টি থেকে মুক্ত ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় গােড়ামীর তিনি সারাজীবন বিরােধিতা করেছেন।