তপন বাগচী কবি। নব্বইয়ের দশকের প্রথম সারির কবিদের একজন। জাতীয় কবিতা পরিষদের আন্দোলনে একসঙ্গে ছিলাম। কবিতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে হেঁটেছি। এখনও আমরা আছি কবিতার রাজপথে। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সে। আমিও ওই কলেজের ছাত্র ছিলাম। একই কলেজের ছাত্র এবং একই জেলার বাসিন্দা। এসব পরিচয় পরিচয় মুখ্য ছিল না। সে কবিতা লেখে, আমিও কবিতা লিখি। এটাই আমাদের সম্পর্কের সুতো। আমি বয়সে বড়, সে বয়সে ছোট। এইমাত্র ভেদ। কবিতার সরণিতে আমরা অভেদ ও অকৃত্রিম। আমরা দুজনই দুই প্রজন্মের একই কুমারের সন্তান। তপন কবিতা লিখে খ্যাতি অর্জন করলেও ছড়া লেখে, গান লেখে, প্রবন্ধ লেখে। সাহিত্যের অনুষ্ঠানে সারা দেশ ঘোরে। বিদেশ যায়। নতুন সাহিত্যকর্মী তৈরিতে তার অবদান আছে। আমাদের বন্ধুকবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাকে ‘কবিপ-িত’ বলে। আমি বলি ’কবিসৈনিক’। তপনের ভ্রমণসঙ্গ আমি উপভোগ করি। একসঙ্গে দিল্লি, কলকাতা গিয়েছি। টাঙ্গাইল-ফরিদপুর গিয়েছি। বয়সের ব্যবধান ঘুচিয়ে তুমুল আড্ডায় মেতেছি। তপন কবিতার চিরায়ত করণকৌশল রক্ষায় বদ্ধপরিকর। নিজের কবিতাও তার স্বাক্ষর স্পষ্ট। তপনের ৫০তম জন্মদিনকে সামনে বেশ কিছু সাময়িকপত্রের বিশেষ সংখ্যা বেরিয়েছে। আমি তাতে তাকে নিয়ে একটা পদ্য লিখেছিলাম। দেখলাম, দুই দেশের অনেক গুণী মানুষ তপনকে নিয়ে লিখেছে। আনন্দে আমার বুক ভরে যায়। আর মনে হয়, আমি বুঝি প্রবীণ হয়ে গেছি। তপনকে নিয়ে কয়েকটি বইও বের হয়েছে। লিখেছে দুই দেশের কবি ও অধ্যাপকগণ। এবার তাকে নিয়ে লিখেছে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অবসপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. তরুণ মুখোপাধ্যায়। তিনি এর আগেও বাংলাদেশের কবিতা নিয়ে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কবি শামমুর রাহমানকে নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ আমি পাঠ করেছি। এবার তপনকে নিয়ে লেখা তাঁর পা-ুলিপি পাঠ করেও আমি মুগ্ধ। সহজ সরল ভাষায় কবি তপন বাগচীর প্রেমিকসত্তা আবিষ্কার করেছেন তিনি। তাঁর ভাষা সরল, প্রকশভঙ্গিও সরল। সাধারণ পাঠক এই গ্রন্থ পাঠ করে তপন বাগচীর কবিতা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করবেন। পাশাপাশি সমালোচক তরুণ মুখোপাধ্যায়র দক্ষতা ও উদারতার কথাও জানবেন। তরুণ মুখোপাধ্যায় কেবল সমালোচক নন, সত্তরের দশকের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবিও বটে! তপনও তাঁর সমগোত্রীয়। আমি দুজনের জন্যই শুভ কামনা জানাই। হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবি মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি ঢাকা ১০০০ ০৪.০২.২০২১