বাগদাদ। ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নগরী। মুসলিম ইতিহাসের বহু স্মরণীয় অধ্যায়ের সাক্ষী এই প্রাচীন নগরী। এক সময় এই শহরজুড়ে ছিল ইলম এবং আলেম-উলামাদের প্রাচুর্য। ইমাম ফাররা, ইমাম কাসায়ি, খলিল ইবনে আহমদ, মোটকথা, ইসলামি জ্ঞানচর্চার আকাশে যে নক্ষত্রগুলোর নাম জ্বলজ্বল করছে তাদের এক বিরাট অংশের জীবনের উত্থান-পতন এই সমৃদ্ধ নগরী বাগদাদে। ইলমের উরুজ তথা উন্নতির এ যুগে বাগদাদের সম্মানিত খলিফা ছিলেন মামুনুর রশিদ। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ইলম চর্চার পথের সকল বিঘ্নতা হয়েছে দূরীভূত। বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করে তৎকালীন উলামায়ে কেরাম ইসলামি জ্ঞানচর্চার উদ্যানকে করেছিলেন সমৃদ্ধ। মামুনুর রশিদ নিজেও একজন ফকিহ, মুহাদ্দিস এবং প্রাজ্ঞ ছিলেন। বহু বিখ্যাত আলেমকে তিনি তর্কযুদ্ধে কুপোকাত করেছেন। ইলমের সংযোজন এবং উন্নতির নেশা তার উপর চেপে বসেছিল। তবে তার এই নেশাই পরবর্তীতে টেনে এনেছিল ইসলামি ইতিহাসের অন্যতম একটি কালো অধ্যায়। সালতানাতের সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হতে গিয়ে তিনি গায়ে জড়িয়েছিলেন নানা কলঙ্কের চাদর। আল্লামা শিবলি নোমানি নিরপেক্ষতার অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে উল্লেখ করেছেন সেই দুর্লভ ইতিহাস। তিনি যেমন ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করেছেন তেমনি সমালোচনার স্থলে সমালোচনা করতে ছাড়েননি। এদিক দিয়ে তার রচিত এই গ্রন্থটিকে যদি দুর্লভ গ্রন্থ বলি তাহলে আশা করি ভুল হবে না। সবশেষে এসে বলব, ইতিহাস নিয়ে রচিত এমন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। বইটি পড়া শেষে পাঠক তার বিবেকের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে খলিফা মামুনকে বিচার করতে সক্ষম হবেন।