ভূমিকা দর্শন হলো জীবন ও জগতের সামগ্রিক ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা। জগতের উৎপত্তি কোত্থেকে? এর শেষ কোথায়? জগতের বস্তুরাজি, জীবজগৎ, মানুষ ইত্যাদি উৎপত্তি কোত্থেকে? কেনইবা এদের উৎপত্তি? এদের পারস্পরিক সম্বন্ধ কী? জীবনের কোনো মূল্য আছে কী? থেকে থাকলে কি তার তাৎপর্য? এ সকল চিন্তা বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে ব্যাকুল করে তোলে। যে ব্যাকুলতা থেকে সৃষ্টি হয় দর্শনের এবং মানুষের মনে উত্থাপিত এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্যই রচিত হয়েছে দর্শনের সুবিশাল িইতিহাস। যার ফলে দেখা যাচ্ছে যে, পরম সত্তা বা বস্তুর প্রকৃত স্বরূপকে জানার প্রচেষ্টাই হলো দর্শন, যে জানার প্রচেষ্টা বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রতিটিমানুষের মধ্যেই কম-বেশি বিদ্যমান। যে জন্য গেরি বলেছেন, ‘সে (মানুষ) শুধু একজন সম্ভাব্য দার্শনিকই নয়, একজন আংশিক দার্শনিক। ইতোমধ্যে সে দার্শনিক হতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের অগভীর চিন্তা, আর একজন সত্যানুসন্ধানীর সুগভীর চিন্তার মধ্যে রয়েছে এক দুস্তর দূরত্ব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা একই পথে সহজ-সরল অগ্রগমন। দর্শন আকস্মিক নয়, অতি প্রাকৃতও নয়। বরং অনিবার্য ও স্বাভাবিক।
জগৎ জীবনকে জানার প্রচেষ্টা হলো মানুষের একটি স্বাভাবিক ক্রিয়া, যে ক্রিয়া মানুষের অনুধ্যানিক ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল এবং যেহেতু জানার এ প্রচেষ্টা বা দর্শন মানুষেল অনুধ্যানিক ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, সেহেতু এটা কোনো বিশেষ ব্যক্তি, জাতি, কর্ম, গোত্র বা সম্প্রদায়ের একচেটিয়া সম্পদ হতে পারে না। এর অর্থ প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি ধর্ম গোত্র বা সম্প্রদায়েরই নিজস্ব একটি জীবনদর্শন, নীতিবোধ, মূল্যবোধ প্রভৃতি সংক্রান্ত কিছু না কিছু ধারণা থঅকেই এবং সেদিক থেকে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জাতি হিসেবে মুসলিম জাতিরও একটি আলাদা জীবন দর্শন, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ থাকা স্বাভাবিক। তাই পৃথিবীর অন্যান্য জাতির ন্যায় মুসলিম জাতিও যুগ যুগ ধরে এক বিশেষ পদ্ধতিতে, অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাঁদের নিজস্ব জীবন দর্শন প্রণয়নে সচেষ্ট ছিল এবং আছে। মুসলমানদের চিন্তা ও কর্মের পরম অবলম্বনহিসেবে সদা কার্যকর রয়েছে কুরআন ও হাদিস। পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে এবং জীবনের নব নব অভিজ্ঞতার আলোকে মুসলিম মনীষীগণ ইসলাম ধর্মকে বোঝার ও বোঝানোর যে চিন্তাশীল ও যুক্তিসম্মত আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান, তারই ফসল হিসেবে গড়ে উঠেছে মুসলিম দর্শন।
মাহবুবুর রহমান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকায় অধ্যাপনা করছেন। তিনি ঢাকায়। এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব-পুরুষ ১৮০০ শতাব্দীতে আরবের ইয়েমেন থেকে চাঁদপুর জেলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। পিতা মরহুম মুহম্মদ আব্দুর রহমান, মাতা মরহুমা ফাতেমা খাতুন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এমএ পাস করার পর ২০১০ সালে ঢাকার ওয়েস্টার্ন কলেজে (৫ প্রভাষক পদে যােগদান এবং পরবর্তীতে উক্ত কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে ঢাকার তেজগাঁও কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যােগদান করেন। তিনি বাংলার ইতিহাস মধ্যযুগ ও বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আগমন ও পীর। আওলিয়াদের জীবন ও কর্মের উপর একজন মৌলিক গবেষক। তাঁর প্রথম লেখা ১৯৯৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।