নাইজেরিয়ার সমস্যা The Trouble With Nigeria মূল চিনুয়া আচেবে অনুবাদ ড. এলহাম হোসেন গ্রন্থ পরিচিতি আচেবে জনগণের সমালোচনা করতে গিয়ে একটা চীনা প্রবাদ উদ্ধৃত করেছেন, “একবার তুমি আমাকে বোকা বানালে এ লজ্জা তোমার; দ্বিতীয়বার আবার যখন আমাকে বোকা বানালে তখন এ লজ্জা আমার”। এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে আচেবে নৃতাত্তি¡ক ভাবনায় আচ্ছন্ন শতধা বিভক্ত নাইজেরিয়ার জনগণের সমালোচনা করেছেন। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় যদি গোত্র-স্বার্থ-চিন্তা বিসর্জন দেওয়া না যায়, তবে জাতি হিসেবে একটি দেশ এগুতে পারে না, শুধু ভূখÐই থেকে যায়। আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে সমাজবাদী রাজনীতিক আমিনু কানোর দৃষ্টান্তও সামনে এনেছেন আচেবে। আমিনু কানোর একটি প্রশ্ন উদ্ধৃত করেছেন, ‘‘তুমি কেন রাজনৈতিক ক্ষমতা চাও? কেন তুমি শাসন করতে চাও? এই প্রশ্নগুলো আচেবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিও ছুঁড়ে দেন। রাজনৈতিক নেতা যদি আওয়োলো বা ওবাসাঞ্জোর মতো নিজ ধ্যান-ধারণা বা আইডিয়োলজিতে আটকে যান, আর ভিন্ন আইডিয়োলজির অনুসারীদের উপর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করতে চান, আবার জনগণও যদি নিজেদের সামগ্রিক রাষ্ট্র-সত্তার অংশ না ভেবে এক স্বতন্ত্র্য মত ও গোত্রের স্বার্থ-চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে, তবে সে জাতির ভাগ্য অবশ্যম্ভাবীরূপে বিপর্যন্ত হয়ে পড়তেই পারে। এই মূল্যায়ন আচেবেকে শুধু সাহিত্যিক নয়, দার্শনিকজ্ঞান-সম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করে। তবে আচেবে হতাশাবাদী নন। তিনি উপলব্ধি করেন, এতসব অমানিশার মধ্যেও আজকের নাইজেরিয়ায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিকদের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এঁরাই দেশকে এগিয়ে নেবেন। দেশের অগ্রগতির লাগাম তো এঁদেরই হাতে। সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীরা সমাজের নাড়ী টিপে দেখেন, রোগ নির্ণয় করেন। কিন্তু রোগ সারানোর কাজ করেন রাজনীতিকরাই। কাজেই ভরসার জায়গা তো তাঁরাই। এঁদের সৎ ও সাহসী উদ্যোগই দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে বলেই আচেবের বিশ^াস। - ড. এলহাম হোসেন কৃত ভূমিকা থেকে লেখক পরিচিতি ড. এলহাম হোসেন একাধারে গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক। বর্তমান সময়ের জিজ্ঞাসু পাঠকদের কাছে সুপরিচিত। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এমফিল করেছেন ঔপনিবেশিক সাহিত্যে। তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় নাইজেরীয় সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবের উপন্যাস। গবেষণাধর্মী লেখালেখির জন্য পাঠকমহলে তিনি বেশ সমাদৃত। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর বেশকিছু গবেষণা-প্রবন্ধ দেশ ও দেশের বাইরের পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে ছাপা হয়েছে। গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন দেশ-বিদেশের বেশকিছু সেমিনার-কনফারেন্সে। বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় আফ্রিকী সাহিত্যের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-গ্রন্থ রচনায় তিনি একজন অগ্রগামী লেখক। তুলনামূলক সাহিত্য, সাহিত্যতত্ত¡, নৃতত্ত¡ ও ইতিহাস তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়। গ্রন্থাবলী: ইংরেজি সাহিত্যের গল্পকথা, Angst and Anxieties: Historical and Psychological Parallels in Chinua Achebe’s Trilogy, Avwd«Kv: আফ্রিকা: সাহিত্য ও নন্দনভাবনা, The Colonial Encounter and the Postcolonial Ambivalence. বাঙ্গালা গবেষণা ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থাবলী: আফ্রিকার সাহিত্যভাবনা; আফ্রিকার ছোটগল্প ও সাহিত্যচিন্তা (অনুবাদ); আফ্রিকার ছোটগল্প (অনুবাদ); সবকিছু ভেঙেচুরে যায় (চিনুয়া আচেবে রচিত থিংস ফল এপার্ট এর অনুবাদ); মুক্তিসন্ধানী শিল্পী (বেন ওকরি রচিত ফ্রিডম আর্টিস্ট এর অনুবাদ); নাইজেরিয়ার সমস্যা (অনুবাদ)।
নাইজেরিয়ার ওনিসা এলাকার কয়েক মাইল উত্তর-পূর্বে ওগিডি-তে চিনুয়া আচেবে জন্মেছিলেন ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর তারিখে। তার বাবা ছিলেন গীর্জার দূত; তার মানে সপ্তাহের দিনগুলােতে তিনি মিশন স্কুলে পড়াতেন, আর একই সঙ্গে গ্রামের গীর্জার দায়িত্ব পালন করতেন। আচেবে-পরিবারের ছেলেমেয়েরাও মিশন স্কুলে পড়তাে, সেখান থেকেই চিনুয়া ভর্তি হয়েছিলেন উমুয়াহিয়া সরকারী কলেজে, ১৯৪৪ সালে। ১৯৪৮ সালে চিনুয়া ঢােকেন ইবাদানের বিশ্ববিদ্যালয়কলেজে, কলা-স্নাতক হন ১৯৫৩ সালে। তার পরে তিনি যােগ দেন নাইজেরীয় বেতার-ব্যবস্থায়, কথিকা- প্রস্তুতকারী হিসেবে। সেখানেই তিনি বেতারের বহির্দেশীয় প্রচারের পরিচালক হন, চলে যান লাগােসে। ১৯৫৮-১৯৬৬ সময়কালে চিনুয়া ৪টি উপন্যাস লেখেনথিংস ফল এ্যাপার্ট (১৯৫৮),নাে লঙার এ্যাট ইজ(১৯৬০), অ্যারৌ অব গড (১৯৬৪) এবং অম্যান অব দ’ পিপল (১৯৬৬)। ১৯৬৬ সালেই প্রকাশিত হয় চিকি আর নদী। পরবর্তীতে নানা ধারায় আরাে অনেক লেখেন চিনুয়া আচেবে। শুধু নাইজেরিয়ার নয়, গােটা আফ্রিকার আধুনিক সাহিত্য-সৃষ্টির ধারাটিকেই গড়ে তােলেন তিনি তাঁর লেখালেখির মধ্য দিয়ে। ২০১৩ সালের ২১ মার্চ প্রয়াত হন চিনুয়া আচেবে।