স্পষ্টবাদী খোলসের অন্তরালে দিলখোলা দীলতাজ রহমান পরিপূর্ণ সৃজনশীল কথাসাহিত্যিক। চলন-বলন ও লেখ্নীতে কথাসাহিত্যিককে যে বহুভঙ্গিমায় নিরন্তর কথা চালিয়ে যেতে হয়, দীলতাজ তার প্রতি পুরোমাত্রায় সুবিচার করেন। তাঁর বিষয় সমকালচেতন, নিগূঢ় সমাজভাবনাতাড়িত ও জীবনময়; গল্পভঙ্গি রসময় ও সুখপাঠ্য। সৃষ্টির প্রতি অকুন্ঠ আত্মবিশ্বাসে শক্তিমান হয়ে সামাজিক-বোধের তাড়নায় তিনি বিন্যাস করেন রচনার বিষয়। ‘দ্বিতীয় শ্রাবণের প্রথম কদম’গ্রন্থে লেখক ফেমিনিজমকে অঙ্গীকার করে অসম-বয়সী দুই্ নারী বুবলি ও বিধবা আকলিমা খানমের জীবনবাস্তবতা, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব প্রেম-ভালোবাসার আদলে অপরূপ ভাষাশৈলীতে প্রস্ফূটিত করে তুলেছেন। এ সমাজে এখনো নারীর একাকীত্ব পুরুষের তুলনায় কতোটা বিষম ও অসহায়তাময়, তা ফুটে উঠেছে বহুবিস্তারী গল্পের মধ্য দিয়ে। বিষয়ের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে লেখক এক চরিত্রকে চরম পরিণতিতে ঠেলে দিতেও দ্বিধান্বিত হননি। বলাবাহুল্য, কালের রূঢ়, হিংস্র নখরের বিপরীতে দীলতাজ রহমান সবসময় কেটে যেতে পারেন সৃজনশীল দাগ। আগের মতোই ‘দ্বিতীয় শ্রাবণের প্রথম কদম’ পাঠককে মনোতুষ্টি দেবে। তাঁর গল্পের পূর্বাপর মুগ্ধপাঠ আমাকে এমন বলার প্রতীতি দিয়েছে।
দীলতাজ রহমানের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গােপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। মা রাহিলা বেগম, বাবা সূফী ভূইয়া মােহাম্মদ জহুরুল হক। ব্যক্তিগত জীবনে দীলতাজ রহমান আশিক, ফারহানা, ফারজানা , আরিফ- চার সন্তানের জননী। আর এদের বাবা এ.কে ফজলুর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার। ফেনী জেলার সােনাগাজী থানাধীন ধলিয়া মৌলবিবাড়ির বউ দীলতাজ রহমানের শ্বশুর ডাক্তার তফাজ্জল আহম্মদ। শাশুড়ি একই বাড়ির বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মৌলবি আবুল বাসার ওসমান। গণির কন্যা করিমননেসা। দীলতাজ রহমান বিট মাস্কট প্রাইভেট লিমিটেড-এর (সফটওয়্যার ফার্ম) চেয়ারম্যান। কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও, ক্রমে পাঠকমহলে দীলতাজ রহমানের গল্পই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। গল্প নির্মাণে যে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয় তিনি দেন, প্রতিটি গল্পের সাথে জীবনের যে ঘনিষ্ঠতা তিনি ফুটিয়ে তােলেন, তাতে শুধু। ভালােলাগা নয়, পাঠককে অবাক করেও ছাড়েন।