ওই যে, ঐ অত বড় দীপ্তিমান প্রখর সূর্য ও মধ্যাহ্ন গগনে এসে পৌঁছলে আহ্নিক গতি অনুযায়ী নিজস্ব নিয়মে কিয়ং পরিমাণ হলেও হেলে পড়তে বাধ্য হয়। মানবজীবনও তাই। সূর্যোদয় থেকে অস্তাচলের পথে ঢলে পড়তে পড়তে বয়স পরিক্রমায় কত কিছুরই না সম্মুখীন হতে হয়। তাকে একেক বাঁকে তা একেক চেহারা। গড়পড়তা আয়ুর হিসেব যদি হয় তাহলে মানবজীবনেরও সংক্রান্তকাল এক গভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের মুখোমুখি হতে বাধ্য এবং হয়ও। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের সঙ্কটাবর্ত। যা একই সঙ্গে যেমন বহুমাত্রিক তেমনই বহুকৌণিকও। যার ফলে এই সঙ্কটকে অনুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ পাঠকের কাছে বোধগম্য করে তোলা খুব সহজ কাজ নয়। কমের পক্ষে সহস্রদল বিকশিত সত্য, ঔচিত্য আর যথার্থের এত এত দিক মিনা ফারাহ তাঁর তামসহ অনুসন্ধানী আলো ফেলে এমন নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন দেখে বিস্ময় মানতে হয়। মধ্য বয়সের রস্যময় অলি-গলি খুঁজতে মিনা ফারাহর এমন স্বচ্ছন্দ সহজ সরল বিচরণ সচরাচর খুবই বিরল দৃষ্ট। লেখকের যেমন পাকা হাত তেমনই তাঁর অতলস্পর্শী গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। চান্দ্রমাসের দুই পক্ষ তো বটেই এছাড়াও আছে অগণন নীহারিকাপুঞ্জ। বিশাল, বিরাট, অনন্ত জীবনপ্রবাহের মধ্যে আজ কত না রকমের স্রোত আদি অতীত থেকে বহমান সেই সব স্রোতোধারা। মানুষের মধ্য বয়সে এসে নানান বাঁকে নানান রূপে প্রতিভাত হতে থাকে। যার মধ্যে অধরা মাধুর্যের রূপখানিও জ্বলে ওঠে পূর্ণ মণিজালে। প্রাঞ্জলতা-কি ভাষার, কি চিন্তাপ্রবাহের, কি কঠিনেরে সহজ করে দেখার ক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই সমান লক্ষণীয়। এমনকি কখনও কখনও পরিস্রুত এই মননশীলতা তাঁর নিজস্ব সীমাবদ্ধতাকেও অতিক্রম করে যায় এ যেন তারই এক উজ্জ্বল ও বিরল দৃষ্টান্ত।
মিনা ফারাহ পেশায় ডেন্টিস্ট এবং ২৫ বছর নিউইয়র্ক প্রবাসী। ওয়াল স্ট্রিটের একজন প্রাক্তন স্টকমার্কেট ইনভেস্টর। বর্তমানে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ বলে খ্যাত জ্যাকসন হাইটস এলাকার অন্যতম সক্রিয় রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর।। সংসারের পাশাপাশি লেখালেখির শুরু ১৯৯৩ থেকে। বিভিন্ন ইস্যু এবং ক্রাইসিসে নিউইয়র্কের বাঙালি ক্যুনিটিতে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং কলম-যােদ্ধা যিনি শুধু লেখার তাগিদে পেশা। থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন ২০০২ সনের গােড়ায়। লেখার কারণে বর্তমানে অর্ধেক সময়। বাংলাদেশে থাকছেন। নিউইয়র্কেও তিনি বিভিন্ন। বিদেশী একটিভিস্ট সংস্থার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত- যার মধ্যে সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, সেকুলার হিউম্যানিস্ট গ্রুপ এবং আই ই এইচ ই অন্যতম। মিনা ফারাহ’র জন্ম: শেরপুর জেলায়। ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট। লেখকের অন্যান্য বইগুলাে হল: কাঠগড়ায় ঈশ্বর ২০০০, সুখ তাের বাড়ি কই ২০০২, প্রবাসের খােলা বােতাম ২০০২, মধ্য বয়সের সঙ্কট ২০০৩, নারীর দাম্পত্যজীবন ও অন্যান্য সঙ্কট ২০০৪, নারীর জীবন যৌবন বার্ধক্য ২০০৪। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাঙলা সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকা থেকে ২০০২ সনে ছােটগল্প আর প্রবন্ধের জন্যে পুরস্কার পেয়েছেন।