"চিত্রকল্প ও বিচিত্র গদ্য" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সাহিত্যবিষয়ক গদ্যে আবিদ আনােয়ার-এর বিশ্লেষণ মানেই পাঠকের জন্য নতুন চিন্তার উদ্বোধন। এ-দেশে সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ ও আলােচনাগ্রন্থের অভাব নেই; অভাব রয়েছে পাঠক-বান্ধব যুক্তিতর্কের ও নতুনত্বের। কবিতার মতাে দুরূহ শিল্পের নানা জটিল উপাদানের ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণও আবিদ আনােয়ার-এর হাতে সম্পন্ন। হয় অসাধারণ সারল্যে। ১৯৯৭ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাঁর বাঙলা কবিতার আধুনিকায়ন আমাদের সাহিত্য-আলােচনায় এক মাইলফলক। পাঠপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাহিত্যিক শওকত ওসমান জনকণ্ঠ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক দীর্ঘ নিবন্ধে লিখেছিলেন: “কিছুদিন আগে একটি আকস্মিকতা আমাকে বুঁদ করে রেখেছিলাে...। ‘বাঙলা কবিতার আধুনিকায়ন’ গ্রন্থ লিখে আবিদ আনােয়ার বহু সাহিত্যঅনুরাগীর প্রভূত উপকার সাধন করেছে...। দেশে মননের অনুশীলন তাে নেই বললেই চলে, বিশ্বাস যাচাই ধাতে নেই--সেখানে বুদ্ধিদীপ্ত এমন একটি গ্রন্থের। আবির্ভাব (হ্যাঁ, আবির্ভাবই বলবাে) সত্যিই অভাবনীয় বৈ কি...বিশ্বাসে মিলায় হরি’র দেশ থেকে সে অনেকদূর অগ্রসর...।” হুমায়ুন আজাদ সাপ্তাহিক বিচিত্রায়-দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন: “আবিদ বেশ চমৎকারভাবে আমাদের কবিতার বিষয়গুলাে ব্যাখ্যা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হলাে আবিদ আনােয়ার-এর এই দ্বিতীয় গদ্যের বইটি, যদিও এর অনেক লেখা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলাে প্রথম গদ্যগ্রন্থ বের হওয়ার আগেই। বর্তমান গ্রন্থে বহু বিচিত্র বিষয়ের অবতারণা থাকলেও বইটি মূলত কবিতাশিল্পের কিছু অতিমূল্যবান উপাদানের আলােচনায় ঋদ্ধ। বিশেষ করে নবীন কবিকর্মী এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের চাহিদা মেটাতে এটিও একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ হিসেবে গৃহীত হবে বলে আমরা মনে করি।
আবিদ আনােয়ার-এর জন্ম ১৯৫০ সালের ২৪ জুন কিশােরগঞ্জ জেলায় কটিয়াদী থানার চর আলগী গ্রামে। বাবা মােঃ আজিমউদ্দিন ও মা হাসিনা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ ১৯৭২ সালে এমএসসি এবং পরে ১৯৮৭ সালে কেবল লেখালেখির সূত্রেই বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড মার্কসহ সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন। সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের National Journalism Scholarship Society-1 সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। কবিতা, ছড়া, গল্প ও গান রচনায় এবং সাহিত্য সমালােচনায় তিনি সমান পারদর্শী । প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চৌদ্দ ।। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স-এর স্মারক পদক ও সংবর্ধনা, ১৯৯৭ সালে । বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক এবং ২০০৬ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চাকুলিয়া ক্যাম্প থেকে কমান্ডাে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে কিশােরগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করেন। ধূলদিয়া রেলসেতু অপারেশনে কৃতিত্বের জন্য । স্বাধীনতার পর কিশােরগঞ্জ মহকুমা মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পের প্রথমে সহ-অধিনায়ক ও পরে অধিনায়কের দাযিত্ব পান। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-র প্রকাশনা বিভাগে কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে।