"বুলারবী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বুলারবীর প্রধান চরিত্র ৭ বছরের লিসা স্বয়ং আস্ট্রিদেরই শৈশব প্রতিচ্ছবি। কার্ল চরিত্রটির মধ্যে বড় ভাই গুনারের দুষ্টুমি ও সাহসী চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। গুনার ছিল খুবই তীক্ষবুদ্ধি সম্পন্ন। খুব সহজেই নতুন নতুন খেলা বের করে তাক লাগিয়ে দিতে পারতাে। মা-পেঁচাটির সাথে দুষ্টুমী করে ওর বাসার মধ্যে যে মুরগীর ডিমটি রেখে দেয়া হয়েছিল, তা আর কেউ নয়, স্বয়ং গুনার বাস্তবে তাই করেছিল। আস্ট্রিদের চার ভাই-বােনের মধ্যে গুনার মারা যায় ১৯৭৪ সালে। গুনারের মৃত্যুশােকে শােকাভিভূত হয়ে উঠেন আস্ট্রিদ লিখেছেন, 'আমার আদরের ভাইটি আজ আর নেই। এ যে কি দুঃসহ ব্যথা, তা প্রকাশ করা যায় না! আমাদের খেলার সাথী, বুলারবীর লাসসে এবং নতুন নতুন খেলা উদ্ভাবনকারী আজ আর নেই।' প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, লিসার দু’ভাই-এর চরিত্র দুটি প্রথম অবস্থায় লাসসে ও বােসসে নামে তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে লাসে ও বিসসে নাম দু’টি পরিবর্তন করে রাখা হয় কার্ল ও বিল। ব্রিত্তার ও আন্নার দাদুর চরিত্রটি আর কেউ নয়, স্বয়ং আস্ট্রিদের দাদু। যিনি ছিলেন খুব স্নেহবৎসল ও গাল্পিক। থাকতেন তাঁর ছােট ঘরে। নিজের দাদুর চরিত্রটি আস্ট্রিদ নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রিত্তা ও আন্নার দাদুর চরিত্রের মধ্যে। আস্ট্রিদের শৈশব জুড়ে ছিল এমন মজার মজার মানুষ। এমনই মজার মজার চরিত্র। এই জীবন্ত চরিত্রগুলােই বার বার ফিরে এসেছে বুলারবী' গল্পগুলােতে। দাদি ঈদা রূপকথা শােনাতেন, তবে সবচেয়ে বড় কথক ছিলেন বাবা স্যামুয়েল। সহজ-সরল, হাসিখুশী মানুষটি যিনি খুব রসিয়ে বিভিন্ন উপমা সহকারে তার সময়কার বিভিন্ন মানুষ, পূর্ব পুরুষদের কথা, উপকথা-রূপকথা, ভৌতিক গল্প শােনাতেন। সে সময় সবাই খাবার টেবিলের ধারে গরম উনুনের পাশে গােল হয়ে বসে গল্প করতেন। উপকথা রূপকথা আর শৈশব স্মৃতির সংমিশ্রণে বুলারবী গল্পগুলাে এক নতুন বৈচিত্রময় মাত্রা পেয়েছে। তাই হাওয়াই থেকে চীন অবধি প্রায় সমগ্র পৃথিবীর শিশু-কিশােররা জানে বুলারবীর শিশুরা কেমন। আজ অবধি পৃথিবীর প্রায় ৮০টি ভাষায় আস্ট্রিদের বিভিন্ন বই অনূদিত হয়েছে। অনূদিত বইগুলাের মধ্যে রয়েছে ৪৪টি ছবির বই, ৪০টি শিশু-কিশাের গল্পের বই এবং ১৭টি অন্যান্য বই ও ভলিয়ম।
লেখক ও অনুবাদক লিয়াকত হােসেন দীর্ঘদিন সুইডেনপ্রবাসী। তিনি সুইডিশ জার্নালিস্ট ইন্সটিটিউট থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত । শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টকহােম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সুইডিশ সাহিত্যের কালজয়ী কিছু বই বাংলায় অনুবাদ করেছেন। ইতােমধ্যে লেখকের মৌলিক ও অনুবাদসহ প্রায় ১৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সুইডিশ সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বাংলাভাষী পাঠকদের মধ্যে ডায়াসপােরা সাহিত্য সৃষ্টিতে মূখ্য ভূমিকা রাখছেন। অনুবাদে অবদানের জন্য স্টকহােম স্থানীয় সরকার থেকে ২০০৪ সালে লাভ করেন সাহিত্য পুরস্কার। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য সুইডিশ রাইটার্স ইউনিয়ন থেকে ২০০৯ সালে লাভ করেন লেখক কার্ল ওত্তে ও আস্ট্রিদ স্মরণে ‘আদি পুরস্কার'। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি এই সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হন। সুইডিশ রাইটার্স ইউনিয়ন, সুইস রাইটার্স হাউজ, বাল্টিক রাইটার্স গিল্ড, গ্রিস রাইটার্স হাউজ, রােভােস রাইটার্স সেন্টার, জুরিখ রাইটার্স হাউস ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আমন্ত্রণে বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। ভ্রমণ করেছেন ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, গ্রিস, রােডোেস, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সুইটজারল্যান্ড, ভারত, মালাউই, চেকোশ্লাভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, মন্টিনিগ্রো, মরােক্কো, স্পেন, সৌদি আরবসহ প্রভৃতি দেশ। ‘ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া' বইটি প্রকাশ করেছে অঙ্কুর প্রকাশনী।