অনেক কাল আগে এক শহরে ছিলেন এক বিজ্ঞ বিচক্ষণ বৃদ্ধ। তাঁর ছিল এক পুত্র। এক দিন ওই বৃদ্ধ কথায়- কথায় পুত্রকে বলেন, যাকে বিশ্বাস করতে পারবে না তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়বে না। হঠাৎ বড়লোকের কাছ থেকে টাকা ধার নেবে না। কাউকে নিজের গোপন কথা বলবে না, বউয়ের কাছেও না। পিতার এ তিনটি উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলে পুত্র। তবে এক দিন সে ভাবে, এর সত্যাসত্য যাচাই করে দেখা যাক না কেন! যেমন ভাবা তেমন কাজ! এরপর সে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এক অবিশ্বস্ত লোকের সঙ্গে আর টাকা ধার করে সবেমাত্র ধনী হয়ে ওঠা এক লোকের কাছ থেকে। কিছু দিন পর সে এক ছাগল জবেহ করে রক্ত মাখায় জামাকাপড়ে। বউকে বলে, তাড়াতাড়ি সাফ করো... রক্ত ধুয়ে ফেলো জামা থেকে! একটা মানুষ খুন করেছি আজ! এ কথাগুলো সে বলে বারবার করে... যেন অপরাধের অনুশোচনায় কত দগ্ধ হচ্ছে তার মন-প্রাণ! বউকে বলে, একমাত্র তুমিই জানলে আমার এ গোপন কথা! কাউকে ঘুনাক্ষরেও বলবে না... তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে আমার! হায়! তোমাকেই বা কেন বলতে গেলাম! এ কথায় প্রতিবাদ করে বউ। বলে, আমাকে তো তুমি ভাল করেই জানো! আমাকে বলেছো তো কি হয়েছে? আমি কি অন্য কেউ? পর? যাহোক... মাস খানেক পর এ কথা সে কথায় বৃদ্ধের পুত্র ভীষণ ঝগড়া করে বউয়ের সঙ্গে। রেগে বউ জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুনে... কি করা যায়? কি করা যায়? পরে এক বুদ্ধি এঁটে সে ছুটে যায় শাহি দরবারে। বাদশাহ'র কাছে নালিশ জানায়, আমার স্বামী খুনি... একটা মানুষ খুন করেছে! বাদশাহ বলেন, খুন? আমার রাজ্যে?
Sazzad Qadir- জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল, টাঙ্গাইলের মিরের বেতকা গ্রামের মাতুলালয়ে। তাঁর পিত্রালয় ওই একই জেলার দেলদুয়ারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও এমএ পাস করেছেন যথাক্রমে ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে। শিক্ষাজীবন শেষে অধ্যাপনা করেছেন করটিয়া’র সা’দত কলেজে, পরে সহকারী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক সংবাদ-এর। বার্তা সম্পাদক ছিলেন দৈনিক দিনকালের। ১৯৭৮-৮০ সালে ছিলেন গণচীনের রেডিও পিকিং-এর ভাষা-বিশেষজ্ঞ। ১৯৯৫-২০০৪ সালে ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক। বর্তমানে দৈনিক মানবজমিন-এর যুগ্ম সম্পাদক। সাযযাদ কাদির নেশায় কবি, পেশায় সাংবাদিক। কবিতা ছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, নাটক। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন ইতিহাস থেকে কল্পবিজ্ঞান পর্যন্ত অনেক বিচিত্র ও কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়ে। বিদেশের জনপ্রিয় উপন্যাস থেকে রসমধুর লোককাহিনী পর্যন্ত অনেক স্মরণীয় সাহিত্যসম্ভার তিনি উপহার দিয়েছেন পাঠক-পাঠিকাদের। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : আজব তবে গুজব নয়, ইউএফও: গ্রহান্তরের আগন্তুক, উপকথন, উপকথন আবারও, উপকথন আরও, উপকথন ফের, গল্পগাছা, তেপান্তর, বরিবল নামা, মনপবন, সবার সেরা, সাগরপার এবং রঙবাহার।