বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাংগঠনিক তৎপরতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিজয়গাথা নিয়েই গ্রন্থটি রচিত। গ্রন্থটি তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ের শুরুতেই দেশভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একইসাথে কলকাতায় শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন, ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের ভূমিকা, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পূর্বাপর ও শেখ মুজিব, শেখ মুজিবের কারাজীবন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ, ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ৭০-এর নির্বাচন, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়েও সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে শুরু করা হলেও এই অধ্যায়ে আরো যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সে সকল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২৫ মার্চে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার প্রসঙ্গ, পাকিস্তানের কারাগারের কিছু ঘটনা, মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকারের শেষের কয়েকটি দিন, ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও ঢাকা দখল, ১৯৭১ সালের সংবাদপত্রগুলোতে ভারত বিরোধী প্রচারণা কী পরিমাণ ছিল প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অধিকন্তু দ্বিতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়েও একটি সংক্ষিপ্ত চালচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাসে নীলফামারী, ইছামতির যুদ্ধে মিত্রবাহিনী বনাম পাকিস্তান বাহিনী ও সৈয়দপুরের আত্মসমর্পণ ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা শিরোনামে সাজানো হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ের শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গটি দিয়ে। ১০ জানুয়ারি ওই দিনটি তুলনা করা হয়েছে অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে। তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসেই একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শিশু বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কী কী করেছিলেন সে বিষয়েও রয়েছে তথ্য-উপাত্ত, বঙ্গবন্ধুর কৃষি বিপ্লব নিয়েও রয়েছে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, রয়েছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন-অগ্রগতির ফিরিস্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নবদিগন্তে বাংলাদেশ কীভাবে প্রবেশ করলো সে সকল প্রসঙ্গ বাদ যায়নি। একই সাথে বাংলাদেশের নবপরিচয়ের রূপকার শেখ হাসিনার নানা পরিকল্পনা নিয়েও রয়েছে বিশ্লেষণ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সৃষ্টিতে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা রয়েছে গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায়ে।
লেখক, গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকার জন্মসূত্রে নীলফামারীর ভূমিপুত্র। ১৯৭৮ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। নীলফামারী সরকারি কলেজ এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি শিক্ষা অর্জন করেন। লেখালেখির শুরু শৈশব থেকেই। ছাত্রজীবনেই প্রকাশিত হয় বেশকিছু লেখা। শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সাথে যুক্ত রয়েছেন। নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মানিত সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকার পেশাগত জীবনে একজন ব্যাস্ত আইনজীবী। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ আইন চর্চায় ব্রত রয়েছেন। ওকালতি জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি আইন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বেশকিছু গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং যৌতুক নিরোধ আইন (২০১৮), নারী ও শিশু আইনের ভাষ্য (২০২১), দ্রুত বিচার আইনের ভাষ্য (২০২১), ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স (২০২২)। আইন ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবেই গবেষণা করে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমী থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় নীলফামারীর ইতিহাস, যা তাঁর নিজের জেলার হাজার বছরের ইতিহাস। শুরুর দিকে তিনি কাব্য চর্চা করতেন। ২০১৩ সালে অন্ধকার পথে জল-কাদার সং নামে তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। একই বছর প্রকাশিত হয় কালোত্তীর্ণ হুমায়ূন আহমেদ নামে একটি জীবনী গ্রন্থ। পরের বছর ২০১৪ সালে আমার নিবন্ধ আমার বন্ধু নামে প্রকাশিত হয় একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। ছোটদের জন্য তিনি গল্প রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- গল্পে কথায় বঙ্গবন্ধু (২০২০) এবং বঙ্গবন্ধুর গল্প (২০২১)। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি গবেষক হিসেবে গবেষণারত রয়েছেন। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : নীলফামারী অঞ্চল’- বিষয়ে তিনি গবেষণা করছেন। এ যাবৎ তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধ, কাব্য, আঞ্চলিক ইতিহাস, গল্প ও আইন বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ মুজিব হত্যাকা-ের ইতিবৃত্ত (২০২০), বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ (২০২১), শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ (২০২২), বঙ্গবন্ধু: কারাজীবন (২০২২)। এ অবধি তাঁর ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রদত্ত মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ অর্জন করেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার সার্ধশতবার্ষিকী স্মারক সম্মাননা ২০১৮।